বার্বাডোজের ক্রিকেটে আলোর রেণু ছড়িয়েছেন পেসার আকিম জর্দান। বিশেষ করে লাল বলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখায় জায়গা করে নেন উইন্ডিজ ‘এ’ দলে। বল হাতে দুর্দান্ত হয়ে উঠছেন, দিনে দিনে পরিণত হচ্ছেন। ক্যারিবিয়ানদের জার্সিতে আছেন অভিষেকের অপেক্ষায়। বর্তমানে ক্যারিবিয়ানদের হয়ে চারদিনের সিরিজ খেলতে সিলেটে আছেন জর্দান। এসএনপিস্পোর্টস২৪ডটকম’র সিনিয়র রিপোর্টার আশিক উদ্দিনের মুখোমুখি হয়ে জানালেন নিজের উঠে আসার গল্প, নাটকীয় ক্যারিয়ারের উত্থান-পতনের গল্প, বাইশ গজের স্বপ্নের কথা।
জর্দানের ক্যারিয়ারে আলো আসে ২০১৮-১৯ মৌসুমে উইন্ডিজের লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্টে। বার্বাডোজের হয়ে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দ্যুতি ছড়ানো সেই টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন ডানহাতি এই পেসার। ৮ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
এরপরই উইন্ডিজ ‘এ’ দলে ডাক পড়ে জর্দানের। ২০১৯ ক্যারিবিয়ার প্রিমিয়ার লিগে হয় অভিষেক। এর তিন বছর পর লাল বলে পথচলা শুরু হয় তাঁর। ২০২২ সালে মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকে খেলেন ৩ ম্যাচ। উইকেট নেন ১২টি। বার্বাডোজের আলোবাতাসে বেড়ে ওঠা দীর্ঘদেহী জর্দান সাদা পোশাকে সফল জন্মভূমির হয়ে খেলেই।
মর্যাদার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত জর্দানের শিকার ৪৮ উইকেটের মধ্যে ৩৮টিই বার্বাডোজের জার্সিতে। শুধু প্রথম শ্রেণি নয়, লিস্ট ‘এ’ প্রতিযোগিতায় তিনি বার্বাডোজের হয়ে শিকার করেছেন ১০ উইকেট। তবে এই ফরম্যাটে তিনি আরো সফল কম্বাইন্ড ক্যাম্পাস অ্যান্ড কলেজ দলের হয়ে। ৩২ উইকেট নেন ১৬ ম্যাচ খেলে।
বার্বাডোজ ও উইন্ডিজ ‘এ’ দলে খেলা জর্দান আছেন জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায়। জুনে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলতে যাওয়ার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩ ম্যাচের সিরিজ খেলবে ক্যারিবিয়ানরা। সেই সিরিজের দলে আছেন জর্দান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে উইন্ডিজের জার্সিতে অভিষেক হয়ে যেতে পারে তাঁর। ক্যারিবিয়ান এই পেসারের বিশেষ সাক্ষাৎকার এসএনপিস্পোর্টস’র পাঠকদের জন্য-
প্রথমবার বাংলাদেশের মাঠে খেলছেন, কেমন উপভোগ করছেন?
আকিম জর্দানঃ ভিন্ন কন্ডিশনে খেলা কঠিন তবে আমি উপভোগ করেছি। নতুন খেলোয়াড় হিসেবে এইসব জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কিল ও মানসিকতা নিয়ে কাজ করি। আর বিশেষ করে এখানে (সিলেট) খেলা সবশেষ ম্যাচটি দারুণ ছিল। যদিও এখানে সবকিছু ব্যাটসম্যানদের জন্য। এখানকার পুরো উইকেট ফ্ল্যাট।
বাংলাদেশের ক্রিকেট-ক্রিকেটার নিয়ে খোঁজ রাখেন?
আকিম জর্দানঃ এটা কোনো ব্যাপার না কি ধরনের ক্রিকেট খেলছি বা কোন ফরম্যাটে। আমি সব ধরনের ক্রিকেটই দেখি। আমি এখানে যাদের সাথে খেলছি তাদের মধ্যে আফিফ হোসেন খুবই ভালো ক্রিকেটার। তার বিপক্ষে বোলিং করাটা আনন্দময়।
ক্যারিয়ারের শুরুতে কাদের সহযোগিতা বেশি পেয়েছেন?
আকিম জর্দানঃ আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে আশেপাশে অনেক মানুষকে পেয়েছি। যারা আমাকে সহযোগিতা করে আমার খেলায়। আমি এখনো শিখছি কিভাবে নিজের খেলায় উন্নতি বেশি করা যায়। পরিবারের কথা বিশেষ করে বলতে হয়। মা আমার পাশে থাকে সবসময়। বাবা খেলা দেখতে মাঠে আসে। আমার বন্ধু জাস্টিন গ্রেভস আমাকে অনেক সহযোগিতা করে। আমি তাদেকে ধন্যবাদ দিতে চাই। পাশাপাশি বার্বাডোজ ক্রিকেট এসোসিয়েশনের কোচদেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। তারা আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
বাংলাদেশের পর আপনার পরবর্তী অ্যাসাইনমেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতে, সেখানে ওয়ানডে সিরিজের দলে আছেন আপনি..
আকিম জর্দানঃ ক্রিকেটে আমি ধাপে ধাপে শিখছি। অনেক কিছু বাকি আছে। সামনে অনেক সিরিজ আছে। আমি সেখানে নিজেকে আরও মেলে ধরতে চাই। কোচদের সাথে নিজেকে নিয়ে বাড়তি কাজ করছি। একজন ক্রিকেটারকে প্রমাণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কিল ও মানসিকতা নিয়ে কাজ করাকে অগ্রাধিকার দেই। ঘরোয়া লিগে সাদা বলে কিছুটা ভালো করেছি, এবার ডাক পেয়েছি জাতীয় দলে। নিজেকে প্রমাণের একটা সুযোগ পেয়েছি। ভালো করার তাড়না আছে ভেতরে।
জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব খেলবে উইন্ডিজ। যদি আপনার দল বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পায় তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখেন…
আকিম জর্দানঃ এটা ভালো প্রশ্ন করেছ (হাসি)। বিশ্বকাপ খেলাটা সবার স্বপ্ন। যেটা আমিও দেখি। তবে এতো দ্রুত এটা আসবে না। আমি শুধু কাজ করে যেতে চাই। নিজের উন্নতি করতে করে যেতে হবে। হয়তো এক সময় বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে (হাসি)। অবশ্য আরব আমিরাতে খেলা চ্যালেঞ্জিং। তবে নিজেকে প্রস্তুত করে রাখছি আমি।
শেষ প্রশ্ন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে খেলার ইচ্ছে আছে?
আকিম জর্দানঃ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পেলে অবশ্যেই খেলবে। না খেলার কিছু দেখছি না। এখানের ক্রিকেটারদের সাথে চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। এখানে জমজমাট ঘরোয়া লিগ হয়। বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা। আমার ইচ্ছে আছে এখানে খেলার।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/১১০
Discussion about this post