নিজস্ব প্রতিবেদক:: আওয়ামীলীগের সরকারের বিদায়ের পর তামিমের জাতীয় দলের ফেরার গুঞ্জন বেড়েছিলো বেশ। বিশেষ করে বিসিবিতে তার তৎপরতায় সমর্থকেরা আশা করছিলেন সাকিব বিহীন বাংলাদেশ দলে দেখা যাবে তামিম ইকবালকে।
বন্দনরগরীর তারকার সামনে সেই সুযোগও ছিলো। তিনি চাইলেই আবার জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন। সাকিব ও হাথুরুসিংহের উপর অভিমানে চট্টগ্রামে অবসর নিয়ে ছিলেন। পরে সেই অবসর ভেঙে ফিরেও ছিলেন। তবে সাকিব-হাথুরু আমলে তামিমের খেলা হয়নি। তাদের বিদায়ের পর তাই এই তারকার খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো বেশ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তামিমকে ফেরার সুযোগ দিয়েছিলো। তবে সাবেক অধিনায়ক সেই সুযোগ গ্রহণ করেননি। লাল সবুজের জার্সিতে তার অধ্যায় শেষ করেছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি আর ফিরবেন না।
২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক তামিমের। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাট দিয়ে তার শুরু। দেশের জার্সিতে ২৪৩ ওয়ানডেতে ৮ হাজার ৩৫৭ রা করছেন। ১৪ সেঞ্চুরির সঙ্গে আচে ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরি। সবশেষ ওয়ানডে খেলেছেন গত বছরে ২৩ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।
ওয়ানডের পর আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার বিপক্ষে খেলেন অভিষেক ম্যাচ। সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ৭৮টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচে ১ হাজার ৫৭৮ রান করেছেন। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে সাত হাফ সেঞ্চুরি। সবশেষ তামিমের অভিষেক হয় টেস্টে।২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রিকেটে অভিজাত ফরম্যাটে পথচলা শুরু তার। সবশেষ ম্যাচ খেলেছেন গত বছরের ৪ এপ্রিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ৭০ ম্যাচে করেছেন ৫ হাজার ১৩৪ রান। ২০৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের সঙ্গী ১০ সেঞ্চুরি ও ৩১ হাফ সেঞ্চুরি।
জাতীয় দলের জার্সিতে দীর্ঘ দিনের পথচলা থামিয়ে দিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ১২ জানুয়ারির মধ্যে আইসিসিতে পাঠাতে হবে বিসিবিকে। তাই তামিমের সিদ্ধান্ত ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচকেরা এই ওপেনারের সঙ্গে বৈঠক করে তার মতামত জানতে চেয়ে ছিলেন। তামিম জানিয়ে ছিলেন, দু’এক দিনের মধ্যে তিনি প্রিয় জনদের সাথে কথা বলে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন।
প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, তামিমকে তারা জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করছেন। তিনি ফিরলে তাকে স্বাগত জানানো হবে। দলে তার প্রয়োজনীতায় আছে। তবে জাতীয় দলে ফিরবেন কিনা এই সিদ্ধান্ত তামিমের নিজের।
এরপর তামিম ইকবাল আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছেন তিনি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরবেন না। জাতীয় দল থেকে দূরে আছেন। দূরেই থাকতে চান। পাঠকদের জন্য তামিম ইকবালের আবেগমাখা ফেসবুক স্টেটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো;
‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি অনেক দিন ধরেই। সেই দূরত্ব আর ঘুচবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ। অনেক দিন ধরেই এটা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন যেহেতু সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় একটি আসর, আমি চাই না আমাকে ঘিরে আবার অলোচনা হোক এবং দলের মনোযোগ ব্যাহত হোক।
এটা অবশ্য আগেও চাইনি। চাইনি বলেই অনেক আগে নিজেকে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছি। যদিও অনেকেই বলেছেন, অনেক সময় মিডিয়ায় এসেছে, আমিই নাকি ব্যাপারটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কিন্তু বিসিবির কোনো ধরনের চুক্তিতে যে নেই, এক বছরের বেশি সময় আগে যে নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তাকে পরিকল্পনায় রাখা বা তাকে নিয়ে আলোচনারও তো কিছু নেই। তার পরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া বা খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেটার বা যে কোনো পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজের অধিকার। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি। এখন মনে হয়েছে, সময়টা এসে গেছে।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তরিকভাবেই আমাকে ফেরার জন্য বলেছে। নির্বাচক কমিটির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আমাকে এখনো উপযুক্ত মনে করার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে আমি নিজের মনের কথা শুনেছি। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে যা হয়েছে, আমার জন্য তা বড় ধাক্কা ছিল, যেহেতু ক্রিকেটীয় কারণে আমি দলের বাইরে যাইনি। তারপরও আমি যেখানেই গিয়েছি, ক্রিকেট ভক্তদের অনেকে বলেছেন, আমাকে আবার জাতীয় দলে দেখতে চান। তাদের ভালোবাসার কথা ভেবেছি আমি। আমার ঘরেও একজন অনুরাগী আছে। আমার ছেলে কখনো আমাকে সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার মাকে বারবার বলেছে, বাবাকে আবার দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়। ভক্তদের হতাশ করার জন্য আমি দুঃখিত। ছেলেকে বলছি, ‘তুমি যেদিন বড় হবে, সেদিন বাবাকে বুঝতে পারবে।’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০