নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শুরুর বিপর্যয় সামলে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে বাংলাদেশের লড়াই। তবে এরপর দ্রুতই তাদের বিদায়ে ফের বিপর্যয়। সেখান থেকে সাকিব আল হাসানের একার লড়াই। ইনিংসজুড়ে বার বার ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াকু পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২৪৬ রান তুলতেই টাইগাররা অলআউট হয়েছে ৪৮.৫ ওভারে। আরও একবার পুরো ৫০ ওভার খেলতে ব্যর্থ স্বাগতিকরা। এছাড়া আড়াইশ রানও পূরণ করতে পারেনি। অলআউটের আগে শেষ দিকে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন ফিফটি হাঁকানো সাকিব। এরও আগে ফিফটি হাঁকান শান্ত-মুশফিকও।
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে বাংলাদেশের পুঁজি মাত্র ২৪৬। জিততে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে ২৪৭ রান। লক্ষ্যটা খুব বড় নয় ইংলিশদের ফর্ম ও ব্যাটিং লাইনআপ অনুযায়ী। তবে এই রান নিয়েও টাইগাররা জয়ের জন্য লড়াই করবেন, সেটা এক প্রকার নিশ্চিতই।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা ছিল একেবারে বাজে। প্রথম ওভারেই দলীয় এক রানের মাথায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার লিটন দাস। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ডাক মেরেছেন তিনি। আর সেই দুই ম্যাচেই আউট হয়েছেন স্যাম কারানের বলে। এই সিরিজে পুরোপুরি ব্যর্থ লিটন, যথাক্রমে ৭, ০, ০ রান করেছেন।
ভালো শুরু পেয়েও সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৭ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরেন চট্টলার ঘরের ছেলে। স্যাম কারানের দ্বিতীয় শিকার হয়েই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তিনি। ৬ বলে ১ বাউন্ডারিতে করে যান ১১ রান। এরপরই ইনিংসের হাল ধরেন শান্ত ও মুশফিক। পাওয়ার প্লে’তে দুই উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৪ রান আসে দলের। ১০ ওভার বা ৬০ বলের মধ্যে ৪৩টিই ডট খেলে বাংলাদেশ।
তবে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই বেশ ভালোভাবে এগিয়ে চলছিল বাংলাদেশ। তাদের জুটি যখন একশ রানের কাছাকাছি, তখন ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরে যান শান্ত। ২৫তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১১৫ আর জুটির রান ৯৮’র সময় আউট হন এই বাঁহাতি। এর আগেই অবশ্য ব্যক্তিগত ফিফটি পূরণ করেন শান্ত। এই সিরিজে ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে তিনি ফেরেন ৫৩ রানে। ৭১ বলে ৫ বাউন্ডারিতে সাজান নিজের ইনিংস।
শান্তর বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। অপরদিকে ফিফটি পূরণ করেন মুশফিকুর রহিমও। ৭ ম্যাচ আর ৭ মাস পর ওয়ানডেতে নিজের ৪৩তম ফিফটি পূরণ করেন রান খরায় ভুগতে থাকা মিস্টার ডিপেন্ডেবল। গেল বছরের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেন। ফিফটি পূরণ করে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন। সেঞ্চুরি হাঁকানোর আশাও জাগিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আর পারেননি।
মুশফিক ফিরেছেন ৭০ রান করে। ৯৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে সাজিয়েছেন নিজের ইনিংস। ৩৩তম ওভারে গিয়ে সাকিবের সাথে তাঁর ৩৮ রানের জুটি ভাঙে আদিল রশিদের বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে বোল্ড আউট হয়ে ফিরলে। উইকেটে এসে দ্রুতই বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ছক্কা হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও, থেমেছেন মাত্র ৮ রান করে। যে আদিল রশিদকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন, তার বলেই বোল্ডআউট হয়ে ৩৫তম ওভারে ফিরেছেন। সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন আরও একবার।
ফের বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশের ঢাল হয়ে তখন দাঁড়ান সাকিব। তাঁকে ভালোভাবেই সঙ্গ দিচ্ছিলেন উইকেটে আসা আফিফ হোসেন ধ্রুব। এক প্রান্ত আগলে রেখে ক্যারিয়ারের ৫২তম ওয়ানডে আর ইংলিশদের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে ফিফটি তুলেন বাংলাদেশের সুপারস্টার সাকিব। কিন্তু ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে নিজের ফিফটি পূরণ করেন সাকিব, আর আফিফ ফিরেছেন সেই ওভারের চতুর্থ বলেই। ক্রিস ওকসের বলে কাভারে খেলতে গিয়ে মঈন আলির হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এই বাঁহাতি করেছেন ২৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে করেন মাত্র ১৫ রান।
অথচ বড় রান করার আর বাংলাদেশের বিপদের মুখে লড়ে যাওয়ার সঠিক সময় পেয়েছিলেন আফিফ। গুরুত্বপূর্ণ সময় ৪৯ রানে জুটি ভাঙার পর বড় রানের আশা মিটে যায়। দ্রুতই ফিরেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। আর আদিল রশিদের ওভারের শেষ বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন। এক বাউন্ডারিতে ৬ বলে ৫ রান করে যান। তাইজুল ফিরেন ২ রান করে।
একা হয়ে পড়া সাকিব বড় রানের আশায় শেষ দিকে ঝড় তোলার চেষ্টা করেন। আর্চারের করা ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে লং অনে জেসন রয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেন ৭৫ রানের ইনিংস। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের সেই ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭ বাউন্ডারিতে। সাকিবের বিদায়ের পর উইকেটে এসে মুস্তাফিজুর রহমান গোল্ডেন ডাক মারলে, আড়াইশ পূরণের আগেই গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের হয়ে জোর্ফ্রা আর্চার একাই ৩ উইকেট শিকার করেন। স্যাম কারান ও আদিল রশিদ ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post