নিজস্ব প্রতিবেদক:: বয়সের কোটা ৩৯ পেরিয়ে গেছে। মাস খানেক পেরুলে ৩৯’র ঘর পেরিয়ে চল্লিশে পৌঁছে যাবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ক্রিকেটীয় হিসেবে বুড়ো হয়ে গেছেন। বাংলার ক্রিকেটেতো অচল, চলে না, কত কিছু। চুল-দাড়ি সাদা হতে শুরু করেছে। তবুও তিনি যেনো দমার পাত্র নন। বুড়ো ঘোড়া এখনো ছুটতে পারে তারুণ্যের গতিতে, দুর্দান্ত রূপে।
বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দেখালেন তার ভেলকি। হারতে থাকা দলকে জেতালেন। নিজেও জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দুর্বার রাজশাহীর দেওয়া ১৯৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে থাকা বরিশালের জয়ের আশা যখন নিভু নিভু, তখন আলো হয়ে আগমন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ৬১ রানে ৫ আর ১১২ রানে ৬ উইকেট হারানো বরিশাল জিতলো দুইশো রানের ঘর ছুঁয়ে। সেখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নামের পাশে ২৬ বলে ৫৬ (নটআউট)। চার ছক্কার ইনিংসে পাঁচটি বাউন্ডারি। কি নেই রিয়াদের ইনিংসে?
বিপিএলের প্রথম ম্যাচে রান হলো। ইয়াসির-বিজয়দের ইনিংসকে বৃথা করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-ফাহিম আশরাফের ব্যাটে দুইশোর ঘর ছুঁয়ে জিতেছে বরিশাল। দুর্বার রাজশাহীকে ফরচুন বরিশাল হারিয়েছে চার উইকেটের ব্যবধানে ১.৫ ওভার হাতে রেখেই। আগে ব্যাট করা দুর্বার রাজশাহী ইয়াসির আলীর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে তিন উইকেটে ১৯৭ রান তুলেছিলো। জবাবে ব্যাট করতে নামা ফরচুন বরিশাল মাহমুদউল্লাহ-ফাহিম আশরাফের ব্যাটে ছয় উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে ফেলে।
জয়ের জন্য ১৯৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা বরিশাল শুরুতেই হোঁচট খায়। ইনিংসের প্রথম বলেই শুন্য রানে প্যাভেলিয়নে ফেরেন ওপেনার শান্ত। আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও বেশি দূর যেতে পারেননি। দলীয় ১২ রানেই ব্যক্তিগত ৭ রানে অধিনায়ক পথ ধরেন প্যাভেলিয়নের। চারে নামা কাইল মায়ার্সও ব্যর্থ হন। তার বিদায়ে দলীয় ৩০ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বরিশাল। ক্যারিবিয়ান তারকা ৫ বলে মাত্র ৬ রান করেন।
দ্রত তিন উইকেট হারানো বরিশাল অর্ধশত রান পেরুতেই হারিয়ে ফেলে চতুর্থ উইকেট। ৫১ রানের মাথায় সাজঘরে ফিরেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে বিদায়ের আগে তিনি দুই চারে ১১ বলে ১৩ রান করেন। নবম ওভারের প্রথম বলেই পঞ্চম উইকেটে সাজঘরের পথ ধরেন তাওহীদ হৃদয়। দলীয় ৬১ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকতে থাকে বরিশাল। পাঁচ চারে ২৩ বলে ৩২ রান আসে হৃদয়ের ব্যাট থেকে।
বিপদে পড়া দলকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ান। ২১৫’র বেশি স্ট্রাইক রেটে মাত্র ২৬ বলে ৫৬ রান করেন দলের জয়ের নায়ক তিনি। তার ব্যাটেই বিপদ সামলিয়ে দারুণ জয় তুলে নেয় দলটি। পাঁচ চারের সঙ্গে চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। তার সঙ্গে সাতটি বিশাল ছক্কায় আড়াইশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ২১ বলে ৫৪ রান করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন পাকিস্তানী ফাহিম আশরাফ। মাঝে তিন ছক্কায় ১৭ বলে ২৭ রান করেন শাহীন আফ্রিদী।
রাজশাহীর হয়ে তাসকিন তিনটি ও হাসান মুরাদ দু’টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমেই উইকেট হারায় রাজশাহী। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান ওপেনার জিসান আলম। দুই মোকাবেলা করে পরাস্ত হন মায়ার্সের কাছে। দলীয় ৫ রানে প্রথম উইকেট হারানো রাজশাহী দ্রুত হারায় দ্বিতীয় উইকেটও। দলীয় ২৫ রানেই ফিরে যান আরেক ওপেনার মোহাম্দ হারিস। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে ফেরার আগে এক ছক্কায় ১২ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
এরপর তৃতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায় রাজশাহী। এবার ঝড় তুলেন ইয়াসির ও বিজয়। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দু’জনে মিলে তুলে নেন ১৪০ রান। ইনিংসের ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে সাজঘরে ফেরেন বিজয়। তার আগে খেলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। রাজশাহীর অধিনায়ক মাত্র ৫১ বলে ৬৫ রানের ঝলমলে এক ইনিংস উপহার দেন সমর্থকদের। পাঁচ ছক্কার ইনিংসে চার ছিলো চারটি।
বিজয় ফিরলেও অবিচল থাকেন ইয়াসির। দুর্দান্ত গতিতে ব্যাট চালাতে থাকেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে ৩২ রান তুলে ইনিংস শেষ করেন তিনি। মাত্র ছয় রানের জন্য করতে পারেননি সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ার সেরা ৯৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৪৭ বলের ইনিংসটি সাজিয়েছেন আটটি বিশাল ছক্কায়। সঙ্গে ছিলো সাতটি বাউন্ডারিও। ৯ রানে অপরাজিত থাকেন রায়ার্ন বার্ল। রাজশাহী থামে তিন উইকেটে ১৯৭ রানে।
বরিশালের হয়ে কাইল মায়ার্স দু’টি ও ফাহিম আশরাফ একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম./নি্র/০০