নিজস্ব প্রতিবেদকব:: অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকের আলী অনিক। মিরাজের হাফ সেঞ্চুরির পর তার হাফ সেঞ্চুরিতে লিড বড় করছে বাংলাদেশ। তিন উইকেটে ১০১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ সকালেই হোঁচট খায়। পরপর ফিরে যান জয়, মুশফিক-লিটনরা। রাবাদা-মহাজার বোলিং তোপে তিন উইকেটে ১০৩ রান থেকে ৬ উইকেটে ১১২ রান হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরপরই সপ্তম উইকেটে জুটি গড়েছেন মিরাজ-জাকের। দু’জনের দায়িত্বশীর জুটিতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ লিড নিয়েছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ দল লিড নিয়েছে ৩৭ রানের। ছয় উইকেটে সংগ্রহ করেছে ২৩৯ রান। ৬৬ রানে মিরাজ ও ৫৩ রানে জাকের আলি অপরাজিত আছেন।
২০২ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসের প্রথম উইকেট হারিয়ে শুরু করে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ১ রান করা ওপেনার সাদমান ফিরেন দলীয় ৪ রানেই।
তিনে নামা অভিজ্ঞ মুমিনুল হকও ইনিংস বড় করতে পারেননি। একই ওভারের চতুর্থ বলে চার রানের মাথায় তিনি প্যাভেলিয়নে ফেরেন রানের খাতা খুলার আগেই। দ্রুত দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ৫৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও জয়। শেষ বিকেলে দৃষ্টিকটু আউটে শান্ত ফিরলে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৫৯ রানের মাথায় অধিনায়ক ৪৯ বলে ২৩ রান করে ফেরত যান প্যাভেলিয়নে।
চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর রহিম ৪৬ রানের জুটি গড়েন। ৩৮ রানে নিয়ে ব্যাট করতে নামা জয় ৪০ রান করতেই চতুর্থ উইকেটে ফিরেন সাজঘরে। ইনিংসের ৩২তম ওভারের প্রথম বলে রাবাদার শিকার হন তিনি। বাংলাদেশের রান তখন ১০৪। তার বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিমও একই ওভারের তৃতীয় বলে ফিরেন প্যাভেলিয়েন। ৩১ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা মুশফিক ৩৩ রানেই ফেরত যান সাজঘরে দলীয় ১০৬ রানেই।
পরপর দুই উইকেট পতনের পর লিটন দাসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। জয়-মুশফিকদের দেখানো পথে হাঁটেন তিনি। তার বিদায়ে ইনিংসের ৩৫তম ওভারের পঞ্চম বলে ১১২ রানের মাথায় ষষ্ট উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ১৫ বলে ৭ রান করেন তিনি।
এরপরই সপ্তম উইকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদশ। মিরাজের ফিফটিতে, জাকের আলীর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ইনিংস হার এড়িয়ে লিড নেয়। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিরাজ ৬৬ রানে ও জাকের আলী ৫৩ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ দল ৬ উইকেটে ২৩৯ রান তুলেছে।
সাউথ আফ্রিকার হয়ে রাবাদা ৪টি ও কেশভ মহারাজা ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে বাংলাদেশ যেখানে নিজেদের মাঠে ১০৬ রানেই গুটিয়ে গেছে নিজেদের প্রথম ইনিংসে, দক্ষিণ আফ্রিকা ভেরেইনার বীরত্বগাঁথা সেঞ্চুরিতে থেমেছে ৩০৮ রানে। ২০২ রানের লিড নিয়ে অলআউট হয় সফরকারীররা।
আজ দ্বিতীয় দিনে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ঢাকা টেস্টর প্রথম দিন ছয় উইকেট হারানো সাউথ আফ্রিকা লিড নিয়েছিলো মাত্র ৩৪ রানের। দ্বিতীয় দিন ভেরেইনা ও মুল্ডারের লড়াকু ইনিংসে ৩০৮ রান তুলে ২০২ রানের লিড নিয়েছে দলটি।
শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ১০৬ রানে অলআউট কর দিয়ে সোমবারই ব্যাটিংয়ে নামে প্রোটিয়ারা। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলেই সফরকালীদের ওপেনার এইডেন মার্করামকে সাজঘরে পাঠান হাসান মাহমুদ। দলীয় ৯ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৬ রানে প্যাভেলিয়নে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধের চেষ্টা করে প্রোটিয়ারা। স্টাবস ও জোর্জি মিলে তুলে নেন ৪১ রান। দুর্দান্ত বোলিং করা তাইজুল ভাঙেন তাদের জুটি। ইনিংসের ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ৫০ রানের মাথায় ২৩ রান করা স্টাবস ফিরেন প্যাভেলিয়নে।
এরপরই দুর্দান্ত হয়ে উঠেন তাইজুল। একে একে ফেরান বাকী চার ব্যাটারকেই। তাইজুলের ৫ উইকেটের দিনে প্রোটিয়ারা ভীষণ সাবধানী ব্যাটিং করে নিয়েছেন লিড। ৩০ রান করেছেন জোর্জি। ২৭ রান করেছেন রিকেল্টন । হাসান মাহমুদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে মুল্ডার দারুণ এক জুটি গড়েছেন ভেরেইনার সাথে। সপ্তম উইকেটে দু’জনে মিলে তুলেন ১১৯ রান। এরপরই দলীয় ২২৭ রানে, ইনিংসের ৬৫তম ওভারের পঞ্চম বলে মুল্ডার সাজঘরে ফেরেন। আটটি চারে ১১২ বলে ৫৪ রান করেছেন তিনি।
মুল্ডার ফিরে গেলেও এক প্রান্ত আগলে রাখেন ভেরেইনা। আদায় করে নেন দুর্দান্ত এক শতক। নবম উইকেটে ডেল পেইটকে নিয়ে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। ইনিংসের ৮৭তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২৯৩ রানের মাথায় ৩২ রান করা ডেল পেইটের বিদায়ে ভাঙে তাদের জুটি। ভেরেইনা ১৪৪ বলে আট চার ও দুই ছক্কায় ১১৪ রানের নান্দনিক দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে শেষ ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফেরেন। দল থামে ৩০৮ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ৫টি, হাসান মাহমদু ৩টি ও মিরাজ ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। সুন্দর একটা সকাল চেয়ে ছিলেন সমর্থকেরা। তবে বাংলাদেশের সেই পুরনো শুরু। বিধ্বস্ত হয়ে, উইকেট হারিয়ে। ঘরের মাঠ, চেনা উইকেট, সহজ প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ দল দাপটের সাথে রাজত্ব করার কথা, সেখানে কিনা ব্যাট হাতে অসহায় টাইগাররা। ঢাকা টেস্টের প্রথম সকালে একে একে ফিরে গেছেন সাদমান, মুমিনুল, নাজমুল, মুশফিকুর রহিমরা। এই ম্যাচেও বাংলাদেশ পাঁচ বোলার নিয়ে খেলার সাহস দেখাতে পারেনি। দিন দিন এগিয়ে যাওয়ার বদলে চেনো পিছিয়ে যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশ। অভিষিক্ত জাকেরকে নিয়ে নামা টাইগার একাদশে একমাত্র পেসার হাসান মাহমুদ।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলেই বিদায় ওপেনার সাদমানের। দলীয় ৬ রানে চার বল খেলা এই ওপেনার ব্যক্তিগত রানের খাতা খুলার আগেই ফিরেন প্যাভেলিয়নে। তার বিদায়ের পর উইকেটে নামা অভিজ্ঞ মুমিনুল হকও টিকতে পারেননি বেশিক্ষন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১৩ রানের মাথায় প্যাভেলিয়নে ফেরত আসেন তিনি। ৬ বলে করেন মাত্র ৪ রান।
পরপর দু্ই উইকেট হারিয়ে দল যখন চাপে, অধিনায়ক তখন উইকেটে। ব্যাট হাতে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে টেনে তুলবেন তিনি, সেই তিনিই ফিরলেন এবার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলেই বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট নেই। দলের ২১ রানে, ব্যক্তিগ ৭ রানে অধিনায়কব ড্রেসিংরুমে ফেরত আসেন।
চতুর্থ উইকেটে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম যোগ দেন। ওপেনার জয়কে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা তিনি। তবে তিনিও ব্যর্থ। ইনিংসের ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে দলের রান যখন ৪০ স্পর্শ করে, মুশফিক তখন ফিরে আসেন সাজঘরে। দুই বাউন্ডারিতে ২০ বলে করেন ১১ রান।
পঞ্চম উইকেটে লিটন দাসকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন জয়। এই ওপেনার টিকে থাকলেও লিটন পারেননি। ইনিংসের ২০তম ওভারের প্রথম বলেই লিটনের বিদায়। ১৩ বলে ১ রান করেছেন তিনি। সকালের প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের নেই পাঁচ উইকেট। প্রোটিয়া দুই পেসার মুল্ডার ও রাবাদার তোপে বাংলাদেশ।
লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশ ছয় উইকেট হারায়। ২৭তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৬০ রানে মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরেন সাজঘরে। ২৪ বলে ১৩ রান করেন তিনি। ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল।
প্রোটিয়াদের হয়ে মুন্ডার, রাবাদা ও মহারাজা ৩টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০