আশিক উদ্দিনঃ শুক্রবারের মাঝ দুপুর। সকাল থেকেই ব্যস্ত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম পাড়া। মূল ফটকের পাশেই অবস্থিত আউটার মাঠ। ঘণ্টা দুয়েক আগ থেকে এখানে অনুশীলনে মগ্ন সিলেট স্ট্রাইকার্স। মোহাম্মদ আমির-মুশফিকুর রহিমরা দলীয় অনুশীলন শেষ করে জুমআ’র নামাজ ধরতে তাড়াহুড়ো করছিলেন। আর মূল মাঠে তখন ভিড় জমাচ্ছিলেন দর্শকরা। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স-ফরচুন বরিশাল ম্যাচ দিয়েই শুরু বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মূল ফটকে ঢুকেই ডানদিকে আউটার মাঠ। সোজা গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড। রঙ মিস্ত্রি ইলিয়াস মিয়া বিপিএল উন্মাদনায় মাততে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হাজির স্টেডিয়ামে। আগে যে’কবার খেলা দেখেছেন স্বাগরিকার স্টেডিয়ামে ততবারই টিকিট নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। এবার আর ইলিয়াস মিয়ার টিকিট বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নি। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিট কিনে আগেভাগে ঢুকলেন মাঠে। আউটারে এক দল অনুশীলন করছে দেখে এগিয়ে এলেন ৯ বছর বয়সী মেয়ে ইশরাত জাহান ইরা, স্ত্রী আয়েশা আক্তার আর ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসিন আহমেদকে নিয়ে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে অনুশীলনরত সিলেট স্ট্রাইকার্সের বেশি কাছে আসতে পারে নি এই ক্রিকেট ভক্ত পরিবার।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ইশরাত জাহান ইরা। সিলেটের উইকেটকিপার ব্যাটার মুশফিকুর রহিমকে দেখেই বাবা ইলিয়াস মিয়াকে বলল, ‘বাবা, এই দেখো মুশফিক আংকেল’। জুমআ’র নামাজের জন্য সাদা পাঞ্জাবি, টুপি আর মাস্ক লাগিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মুশফিক। টিভিতে এতদিন দেখে আসা ব্যাট-প্যাড বা কিপিং গ্লাভস হাতের এই ক্রিকেটারকে চিনতে একটুও অসুবিধে হয় নি ইরার। খানিক পরই টিম বাস নিয়ে ফরচুন বরিশাল ঢুকে মাঠে। বাসের পোস্টারে সাকিবের ছবি দেখে, সাকিব, সাকিব বলে উঠল সে। ৯ বছর বয়সী মেয়ের সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠেন ইলিয়াস মিয়া। তাদেরকে সঙ্গ দেন আয়েশা। এই প্রথমবার দেশ-বিদেশের একাধিক তারকা ক্রিকেটারদের এত কাছ থেকে দেখছেন তারা।
ইলিয়াস মিয়ার স্ত্রী আয়েশাও ক্রিকেটের পাড় ভক্ত। ১২ বছর আগে সংসার জীবনে পা দিয়েছেন। টিভিতে প্রায়ই খেলা দেখেন তিনি। এই প্রথমবার আসলেন স্টেডিয়ামে। শহরের নাসিরাবাদ এলাকায় ইলিয়াস-আয়েশা দম্পতির বাসা। তাদের মেয়ে ইরা সফেদ কণ্ঠে ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের গল্প শোনাচ্ছিল। চট্টগ্রামের সমর্থনে মাঠে এসেছে আজ। সাকিব আল হাসানকে পছন্দ বেশ। এই বয়সেও সে দেশ-বিদেশের একাধিক খেলোয়াড়দের নাম জানে, তাদেরকে চিনে। ভারতের বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা; পাকিস্তানের বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদিদের খেলা ভালো লাগে তার। আর্জেন্টিনা আর লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ জয়ও দেখেছে পরিবারের সাথে। সেই গল্পও শুনিয়েছে সে।
শুক্রবার সাগরিকার আউটারের পাশে দাঁড়িয়ে ইরা জানায়, ‘সাকিব-কোহলি আমার পছন্দের ক্রিকেটার।’ বাংলাদেশ ছাড়া তার প্রিয় দল ভারত। তবে ইরার বাবা-মা পাকিস্তান দলের খেলা পছন্দ করেন। ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের পরে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা পছন্দ আমার। আমি প্রায়ই মাঠে খেলা দেখতে আসি। ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে নিয়ে মাঠে আসা হয় না খুব একটা। আজ শুক্রবার ছুটির দিন। চট্টগ্রামের খেলা হওয়ায় মেয়ের জোরাজুরিতে মাঠে এসেছি। নিজেদের দল (চট্টগ্রাম) আর মেয়ের পছন্দের ক্রিকেটার সাকিবের খেলা দেখব।’ মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসিতে ইলিয়াস মিয়া শোনালেন, ‘আমার মেয়েটা ক্রিকেটের পাগল। সাকিব-কোহলি ভক্ত। ফুটবলও দেখে সে। ওরা এই প্রথমবার মাঠে আসল আজ।’
Discussion about this post