নিজস্ব প্রতিবেদক:: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের উদ্বোধনী ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। মাশরাফীদের স্ট্রাইকার্সরা উড়িয়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জার্সদের। নবম আসরের প্রথম ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্স ৮ উইকেটে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে।
রাজা-আমিরদের বোলিং তোপে চ্যালেঞ্জর্সরা রানের চাকা সচল করতে পারেনি। তরুণ পেসার রেজাউর রহমান রাজা করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। শুভাগত হোমের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স তাই তুলতে পারে মাত্র ৮৯ রান। সহজ লক্ষ্যে খেলতে নেমে শান্ত-জাকিরের ব্যাটে বড় জয় নিশ্চিত করে সিলেট।
৯০ রানের টার্গেটে খেলতে নামা সিলেট স্ট্রাইকার্সের শুরুটাও অবশ্য ভাল হয়নি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারায় দলটি। দলীয় ১২ রানেই ফিরে যান ওপেনার কুলিন অ্যাকারমন। ৫ বলে ১ রান করা এই ওপেনারকে সাজঘরে পাঠান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।
দ্বিতীয় উইকেটে জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত জুটি গড়েন। ৪৫ বলে ৬৩ রান যোগ করেন দু’জন। ইনিংসের ১০ম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৭৫ রানের মাথায় দুর্দান্ত ব্যাট করা জাকির হাসান ফিরেন প্যাভেলিয়নে। দুই চার ও এক ছক্কায় ২১ বলে ২৭ রান করেন এই ব্যাটার। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসা মুশফিক শান্তকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। তিন চার ও এক ছক্কায় ৪১ বলে ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন শান্ত। এক চারে ৮ বলে ৬ রানে তার সঙ্গী হন মুশফিকু। ৪৫ বল হাতে রেখেই সিলেটের ৮ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ৩.৩ ওভারে ১১ রানে ১ উইকেট ও মালিন্দা ২ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৮৯ রানে থামে শুভাগত হোমের দল। কোনোমতে অলআউটের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে চট্টগ্রাম। তবে গড়েছে নতুন লজ্জার রেকর্ড। বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচের ইতিহাসে এর থেকে কম রান নেই আর কোনো দলের। সর্বনিম্ন রানের সেই রেকর্ড চট্টগ্রামের। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়ে এদিন কেবল আফিফ হোসেন ধ্রুব ও আল আমিন জুনিয়র কিছুটা রান করতে পেরেছেন। মাত্র তিন জন ব্যাটার ব্যক্তিগত রান দুই অঙ্কে নিতে পেরেছেন।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে দল। মাশরাফী ও আমিরের করার প্রথম দুই ওভার থেকে মাত্র ১ রান করে মোট ২ রান নিতে পারে চট্টগ্রাম। তবে তৃতীয় ওভারে মাশরাফীকে একটি ছক্কা হাঁকান ওপেনার মেহেদী মারুফ। সেই মারুফ পঞ্চম বলে শিকার হয়েছেন রান আউটের।
আরেক ওপেনার দারউইস রাসুলির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউটের কবলে পড়েন মারুফ। আর দারুণ এক থ্রো’তে সেই রান আউটের কারিগর জাকির হাসান। সরাসরি স্টাম্প ভেঙে দেন। যার ফলে ১৪ বলে ১ ছক্কায় ১১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মারুফ।
এরপর উইকেট পতন হয় রাসুলির। তবে টিকতে পারেননি বেশি সময়। মোহাম্মদ আমিরের করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রাসুলি। বাউন্সিং বল বুঝতে পারেননি তিনি। উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকের লাফিয়ে উঠা দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে ধরতে হয় ড্রেসিং রুমে পথ। নামের পাশে তখন ৯ বলে মাত্র ৩ রান।
পাওয়ার প্লে শেষে দলটির সংগ্রহ ছিল ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২১ রান। পাওয়ার প্লে শেষে পরের ওভারেই বল করতে আসেন তরুণ রেজাউর রহমান রাজা। আর এসেই শিকার করেন চট্টলার অধিনায়ক শুভাগত হোমের উইকেট। ওভারের দ্বিতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তৌহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন শুভাগত। ৭ বলে ১ রান করেই ফিরেন প্যাভিলিয়নে।
এরপর দশম ওভারে ফিরেন আল আমিন জুনিয়রও। আক্রমণাত্বক খেলতে গিয়ে কলিন অ্যাকারম্যানের করা ওভারের পঞ্চম বলে মুশফিকুর রহিমের স্টাম্পিংয়ের শিকার হন। এর আগে টপ অর্ডারে নামা এই ব্যাটার খেলে যান ২০ বলে ১ বাউন্ডারিতে ১৮ রানের ইনিংস।
পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সদ্য উইকেটে আসা উসমান খান। রাজার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুশফিকুর সহজ ক্যাচে পরিণত হন। ৪ বলে ২ রান করেন আউট হওয়ার আগে। ম্যাচের ১৪তম ওভারে রাজার তৃতীয় শিকার চট্টগ্রামের আরেক বিদেশী ভারতীয় বংশদ্ভোত উন্মুক্ত চাঁদ। এবার ক্যাচ লুফে নেন কলিন অ্যাকারম্যান। উসমানের বিদায়ের পর উইকেটে এসে ১০ বল খেলে মাত্র ৫ রান করে বিপিএলে অভিষেক হলো উন্মুক্তের।
লোয়ার মিডল অর্ডারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে ৩ রানেই বোতলবন্দি করেছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তাজা। এরপর এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকা আফিফকে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করে ফেরান মোহাম্মদ আমির। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ২৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৫ রান করেন আমির। ১৯তম ওভারে নিহাদউজ্জামানকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ উইকেটের দেখা পান রাজা। লোয়ার অর্ডারে কেউ আহামরি কিছু করতে না পারায় মাত্র ৮৯ রানে থেমে যায় চট্টগ্রামের ইনিংস।
সিলেটের হয়ে এক রাজাই ৪ ওভারে ১৪ রানে খরচায় শিকার করেছেন ৪ উইকেট। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। এছাড়াও দারুণ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ আমির, মাশরাফী বিন মোর্ত্তাজারা। এর মধ্যে আমির ৪ ওভারে এক মেইডেনসহ মাত্র ৭ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেন। ৪ ওভারে ১৮ রান খরচ করে মাশরাফী ১টি ও ৩ ওভারে ২২ রান খরচ করে অ্যাকারম্যান ১টি উইকেট শিকার করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০
Discussion about this post