আশিক উদ্দিনঃ নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে একটি ফার্মে চাকরি করেন সানি শ। এর ফাঁকে খেলা দেখে বেড়ান তিনি বিশ্বের নানা প্রান্তে। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য ৬৬তম বার বিদেশ ভ্রমণে বের হয়েছেন ঘর ছেড়ে। সানির এবারের পদচারণা বাংলাদেশে, সিলেটে। এখানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট সিরিজ মঙ্গলবার মাঠে গড়িয়েছে। যার কারণেই চতুর্থবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন সানি। মঙ্গলবার সকাল সকাল তিনি চলে আসেন স্টেডিয়ামে। এসে টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষা করতে হয় কতক্ষণ। নির্ধারিত সময়ে টিকিট কিনে আসেন গ্যালারিতে। ১১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রিয় দেশকে সমর্থন যোগাতে নয়নাভিরাম সিলেটের মাঠে হাজির ৭৩ বছর বয়সী সানি।
ক্রিকেটের পাশাপাশি কমনওয়েলথ গেমস, রাগবি, ইয়টিং এবং রোয়িংয়ের মতো খেলাতেও নিউজিল্যান্ডের জন্য গলা ফাঁটান সানি। তাসমান সাগরপাড়ে অবস্থিত দেশটির জন্য তিনি ফুটবল বিশ্বকাপেও ম্যাচ দেখেছেন মাঠে গিয়ে। সবমিলিয়ে ১২২ বার দেশের বাইরে গেছেন। নিউজিল্যান্ড দলের বেশির ভাগ বিদেশ সফরে গ্যালারিতে দেখা পাওয়া যায় ‘সুপারফ্যান’ খ্যাত সানিকে। এবার তাঁকে দেখা গেছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্টেও। সবশেষ ভারতে হয়ে যাওয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপও দেখেছেন মাঠে বসে। আর সেখানে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও গ্যালারিতে ছিলেন তিনি। সেই ম্যাচটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ‘টাইমড আউট’ হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
বিশ্বকাপে ‘টাইমড আউট’ ঘটনাটি ঘটে গত ৬ নভেম্বর। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ম্যাথিউস নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রথম বল খেলার জন্য প্রস্তুত হতে পারেননি। সুযোগ পেয়ে আম্পায়ারদের কাছে আউটের আবেদন জানিয়ে সেটারই সদ্ব্যবহার করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। ম্যাথিউসের ‘টাইমড আউট’ ঘিরে মাঠে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, মাঠের বাইরেও তৈরি হয় বিতর্ক। এই ঘটনা এখনও মনে লেগে আছে প্রথমবার সিলেটে টেস্ট দেখতে আসা সানিরও। গায়ে নিউজিল্যান্ডের জার্সি, চোখে রোদচশমা পরিহিত এই ভদ্রলোক জানান, সাকিবের সেদিনের ঘটনা তাঁর পছন্দ হয় নি! এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরের সাথে আলাপকালে সানি বলেন, ‘বিশ্বকাপে সে (সাকিব) এভাবে না আউট (টাইমড আউট) করলেও পারতো। আম্পায়াররা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছে সে আপিল বাদ দিতে চায় কী না, কিন্তু সে আপিল বহাল রাখে। এরকম আউট ক্রিকেটের জন্য ভালো নয়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’
বাংলাদেশে সানির পছন্দের ক্রিকেটারের কথা জানতে চাইতেই বললেন মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঝে মোহাম্মদ আশরাফুল আমার পছন্দের একজন। কিন্তু এখন সে আর খেলে না। ২০০৪ সালের সেই সিরিজে বাউন্ডারির কাছে দাঁড়িয়ে আশরাফুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। এটা কিন্তু তোমাদের নতুন স্টেডিয়ামে না। তখন তোমরা পুরাতন একটা স্টেডিয়ামে খেলতা (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম)। ওইটা মনে হয় ফুটবল স্টেডিয়াম ছিল। সেই ম্যাচে আশরাফুল ৮০ কিংবা ৮৭ রান করেছিল। সে দারুণ একজন ব্যাটার ছিল।’
‘আমার এমন জীবনটাই এমন, আমি পুরো বিশ্বে খেলা দেখে বেড়াই। নিউজিল্যান্ডকে অনুসরণ করে এটি আমার ১২২তম সফর, বেশিরভাগই অবশ্য ক্রিকেটের জন্য। ব্ল্যাকক্যাপসদের সঙ্গে এটি আমার ৬৬তম ক্রিকেটীয় সফর। রাগবি, ইয়টিং, রোয়িং এসবের জন্য ২৫বার বিদেশ ভ্রমণ করেছি। আমি কনওয়েলথ গেমস, ফুটবল বিশ্বকাপেও দলের জন্য গলা ফাটাতে গেছি। বলতে পারেন এটা আমার প্যাশন। খেলার জন্য বিশ্ব ভ্রমণ করতে আমার ভালো লাগে’- যোগ করেন সানি।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/১১০
Discussion about this post