স্পোর্টস ডেস্ক: কোচের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়া নারী ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়া প্রাণ শঙ্কায় আছেন। নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন, করেছেন জিডি। ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়ার পর আজ বুধবার দুপুরে রাজধানী মতিঝিল থানায় জিডি করেন তিনি।
জিডি করার সময় সুমাইয়ার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমী।বাংলাদেশ নারী দলের ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়ার জন্ম ও বেড়ে উঠে জাপানে। তবে তিনি বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকেই। সেই দেশের জন্য খেলে এখন আছেন হত্যার হুমকিতে। তাকে ধর্ষণেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে আলোচনাং বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীন না করার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করছেন নারী দলের সিনিয়র ১৮ জন ফুটবলার। অনুশীলন বয়কট করেছেন তারা। দিয়েছেন গণ অবসের হুমকি। ১৮ জন বিদ্রোহী ফুটবলার সম্প্রতি এক চিঠিতে বাফুফেকে জানিয়ে দিয়েছেন, বাটলার কোচ থাকলে বাংলাদেশের হয়ে খেলা দূরে থাক, অনুশীলন ক্যাম্পেও অংশ নেবেন না। সবাই এক সাথে অবসর নিয়ে নেবেন।
ইংরেজিতে লেখা চিঠিতে বাটলারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন মেয়েরা। সেই চিঠি লিখেছিলেন মাতসুশিমা সুমাইয়া। এ ঘটনার পর থেকেই সুমাইয়ার জীবনে যেন ঘোর অমানিশা। প্রাণ সংশয়ে পড়েছেন তিনি। পাচ্ছেন ধর্ষণের হুমিকও। এই নারী ফুটবলার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে তিনি অসংখ্যবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমার নাম মাতসুশিমা সুমাইয়া। আমি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হিসেবে আন্তস্কুল প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে মালদ্বীপে লিগ খেলা এবং বাংলাদেশের হয়ে ২০২৪ সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা পর্যন্ত যাত্রাটা আমার কাছে অম্লমধুর ছিল।’
দেশের মানুষ তাদের লড়াইয়ের প্রর্শসা করতে জানে না উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘যখন থেকে আমি এই পথ (ফুটবলকে) বেছে নিয়েছি, আমার স্বপ্ন ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা, যাদের মা–বাবা চান তারা শুধু পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুক। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, (খেলার প্রতি) আবেগ এবং নিবেদন সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিতে পারে। এখন এটা ভেবে আমার অনুতাপই হচ্ছে—আমার শিক্ষা, আমার পরিবার, আমার ঈদ, সবকিছু এমন একটি দেশের সেবা করার জন্য, যে দেশ আমাদের লড়াইয়ের প্রশংসা করতে জানে না।’
হত্য ও ধর্ষণের হুমকিতে তিনি ভেঙে পড়েছেন জানিয়ে লিখেন, ‘ফুটবল খেলার জন্য আমি আমার মা–বাবার সঙ্গে লড়াই করেছি, শুধু এই বিশ্বাসে যে আমার দেশ আমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সত্যিকার অর্থে কেউই একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে না। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার এবং সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম সামর্থ্য আমার আছে। কয়েক দিন ধরে আমি অসংখ্যবার মৃত্যু ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। (হুমকিতে) ব্যবহৃত শব্দগুলো আমাকে এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে, যা আমি কল্পনাও করিনি। আমি জানি না, এই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে এটা বলতে চাই, শুধু তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য আর কাউকে যেন এর মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০