স্পোর্টস ডেস্ক:: কানপুর টেস্টে হিন্দু মহসভার হামলা নিয়ে চিন্তিত নয় স্থানীয় পুলিশ। বাংলাদেশ-ভারত দলকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এক হাজার পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আছে একশোটি ক্যামেরার সমন্বয়ে গড়া বিশেষ এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, নেট বোলারদের চেয়ে পুলিশের সংখ্যাই বেশি।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের পর হমলা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে ভারতের ধর্মীয় সংগঠন ‘হিন্দু মহাসভা’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা কানপুরে বাংলাদেশকে না খেলতে দেওয়ার হুমকি আগেই দিয়ে রেখে ছিলেন। ‘হিন্দু মহাসভা’র সদস্যদের অভিযোগ, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্যাতন করা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলাকারী দেশের বিপক্ষে যেনো তাদের শহরে ম্যাচ না খেলে ভারত। তবে স্থানীয় পুলিশ এই হুমকিকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
ভারতীয় সাংবাদিকদের একজন পুলিশ কর্মকর্তা হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন ‘দুটি লাঠি পড়লেই দেখবেন সব ঠিক।’ যার অর্থ দাঁড়ায় আন্দোলনকারীদের পুলিশ লাঠি পেটা শুরু করলে সব টিক হয়ে যাবে। বোঝাই যাচ্ছে টেস্ট ম্যাচ আয়োজনে বিসিসিআই বদ্ধ পরিকর। তাতে করে পুলিশ হার্ডলাইনেও যেতে পারে। সব মিলিয়ে কানপুরে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বুধবার মাঠ পরিদর্শন করেছেন উত্তর প্রদেশ পুলিশের অতিরিক্তি ডিসিপি রাজেশ শ্রীবাস্তব। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই দলের নিরাপত্তায় যা যার করণীয় তার সব কিছুই করছে পুলিশ প্রশাসন। নির্বিঘ্নে ম্যাচ আয়োজন হবে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। একটি হচ্ছে আইসোলেশন কর্ডন—যেটি মাঠ, পিচ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাকি দুটি মাধ্যমে প্যাভিলিয়ন এ স্টেডিয়ামের রাস্তাসহ আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কর্ডনই তিন-চারটি ভাগে বিভক্ত। কাজ করছে ১ হাজার পুলিশ, ক্যামেরা রয়েছে ১০০–এর মতো।’
পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে হামলা করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘হুমকি নিয়ে অনেক ধরনের তথ্য আছে। এগুলো কিছু বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। উত্তর প্রদেশ পুলিশের নিজস্ব মানে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ফাঁকি দিয়ে কিছু করা অসম্ভব। তাই বলতে পারি কোনো উদ্বেগ নেই।’
অখিল হিন্দু মহাসভার হুমকিতে স্থানীয়দেরও সমর্থন আছে বেশ। কেননা সিরিজ কাভার করতে যাওয়া বাংলাদেশী সাংবাদিক, খেলা দেখতে যাওয়া সমর্থকদের কোনো হোটেলই রুম দিচ্ছে না। আগ থেকেই সাংবাদিকরা হোটেলগুলোর রুম বুকিং করে গিয়ে ছিলেন। কিন্তুু সেখানে যাওয়ার পর বুকিং বাতিল করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই মুসলিম মালিকানাধীন হোটেল খুঁজে বের করে উঠছেন।
কানপুর টেস্টের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা ইন্টেলেজিন্স ব্যুরোসহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য;দের। বিশেষ করে গ্রিনপার্ক স্টেডিয়াম এলাকা, অনুশীলন ভেন্যু, টিমগুলোর যাতায়াতের রাস্তা এবং টিম হোটেলে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কানপুর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারিশ চান্দার জানিয়েছেন, ক্রিকেট দল থেকে পাওয়া অনুরোধের কারণে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছি যাতে কোনও আন্দোলন গড়ে না উঠে।’
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকেও কথা বলতে হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। এক প্রশ্নের জবাবে টাইগার কোচ নিরাপত্তার ভার ছেড়ে দিয়েছেন ভারতীয় বোার্ডের উপর। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বিসিসিআইয়ের ওপরই আস্থা রাখছি। আমরা চিন্তিত নই।’
টেস্ট সিরিজের পরপরই শুরু হবে টি-২০ সিরিজ। সেই সিরিজেও আছে হুমকি। দেশটির মধ্য প্রদেশে আগামি ৬ অক্টেবার শুরু হবে টি-২০ সিরিজ। কানপুরের মতো একই অভিযোগ করে ম্যাচের দিন ‘গোয়ালিয়র বনধ’ তথা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিয়েছে হিন্দু মহাসভা।গোয়ালিয়রের শ্রীমন্ত মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়াম প্রথম টি-২০ ম্যাচের ভেন্যু। হিন্দু মহাসভার জাতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট জয়বীর ভরদ্বাজ গোয়ালিয়রে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার বিরোধিতা করে বলেছিলেন, তারা চান না নির্মমভাবে হিন্দু নির্যাতনকারী কোন দেশের বিরুদ্ধে এখানে ম্যাচটি হোক। যেখানে এখনও দেশটিতে হিন্দু নির্যাতন চলছে সেখানে ভারত কিভাবে তাদের বিপক্ষে খেলে? এখানে খেলা ঠিক হবে না। এই ম্যাচ আয়োজন অনুচিত। তাই তারা ম্যাচের দিন ‘গোয়ালিয়র বনধ’ তথা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০