আজ থেকে শুরু হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে বসছে এবারের আয়োজন। একদিনের ক্রিকেটের এই মেগা ইভেন্টের জন্য প্রস্তুত ভারত। বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের জন্য মোট ১০টি স্টেডিয়াম প্রস্তুত করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
রাজীব গান্ধী স্টেডিয়াম- হায়দ্রাবাদ
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৩৯ হাজার ২০০
বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এবারের বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামে। ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজিত হয় এই স্টেডিয়ামে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ হোম ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামকে।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নামে এই মাঠের নামকরণ করা হয়েছে। এই মাঠের উত্তরপ্রান্তের নামরকরণ করা হয়েছে ভারতের সাবেক ব্যাটার ভিভিএস লক্ষ্মনের নামে। আর প্যাভিলিয়ন এন্ডের নাম শিব লাল যাদব-এর নামানুসারে। এই মাঠের উইকেট ফ্ল্যাট হয়ে থাকে। অর্থাৎ ব্যাটারদের অনুকূলেই থাকে।
এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের মোট তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে। এছাড়াও দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ হয় এখানে। মূল পর্বে তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি করে ম্যাচই পাকিস্তান-নেদারল্যান্ডসের। বিশ্বকাপের ২য় ম্যাচ ৬ অক্টোবর দুপুরে লড়বে পাকিস্তান-নেদারল্যান্ডস। ৬ষ্ঠ ম্যাচে ৯ অক্টোবর দুপুরে খেলবে নিউজিল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস আর ৮ম ম্যাচ ১০ অক্টোবর দুপুরে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম- ধর্মশালা
দর্শক ধারণক্ষমতা- ২৩ হাজার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ধরা হয় হিমাচল প্রদেশকে। আকাশ ছোঁয়া পাহাড় ও পাহাড়ি অঞ্চল দেখতে প্রতিবছরই এই অঞ্চলে পাড়ি জমান লাখো প্রকৃতিপ্রেমী। পাহাড়ের বুক চিড়ে এখানেই গড়া হয়েছে এই স্টেডিয়ামটি। নয়নাভিরাম এই মাঠেই বাংলাদেশ আগামী ৭ অক্টোবর নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে। এ ছাড়াও এবারের বিশ্বকাপের আরও চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ধর্মশালায়। বাংলাদেশ তাদের প্রথম দুই ম্যাচ এই মাঠেই খেলবে। আফগানিস্তান ম্যাচের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও (১০ অক্টোবর) এই মাঠে লড়বে টাইগাররা। এছাড়া ১৭ অক্টোবর নেদারল্যান্ডস-দক্ষিণ আফ্রিকা, ২২ অক্টোবর ভারত-নিউজিল্যান্ড ও ২৮ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড।
২৩০০০ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই স্টেডিয়ামে মোট চারটি ওডিআই ম্যাচ হয়েছে। চারটির মধ্যে দুটিতে স্বাগতিক দেশ আর দুটিতে সফরকারী দল জয়লাভ করেছে। প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে একবার, পরে ব্যাট করা দল জিতেছে তিনবার। এই মাঠে সর্বশেষ ম্যাচ হয়েছে ২০১৭ সালে।
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম- পুনে
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৩৭ হাজার
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচ আয়োজন করতে চলেছে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম- পুনে। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্টেডিয়ামে আগামী ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ বনাম ভারুত ম্যাচ। এই মাঠে এবারের বিশ্বকাপের মোট ৫ ম্যাচ আয়োজন হবে।
মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম, পুনের- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। মাঠের নিচে বালির আস্তরণ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বলে অতি ভারী বর্ষণের পরও অল্প পরিচর্যার পরই এখানে ম্যাচ শুরু করা সম্ভব। এই মাঠের দর্শক আসন সংখ্যা ৩৭ হাজার।
এবারের বিশ্বকাপে এই মাঠে আগামী ১৯ অক্টোবর ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ ছাড়া হবে ৩০ অক্টোবর আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ১ নভেম্বর নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা, ৮ নভেম্বর ইংল্যান্ড- নেদারল্যান্ডস ও ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া।
এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম- ব্যাঙ্গালোর
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৪০ হাজার
বিসিসিআই-এর সাবেক চেয়ারম্যান এম চিন্নাস্বামীর নামে ব্যাঙ্গালোরের এই স্টেডিয়াম। এর আগেও বিশ্বকাপ আয়োজন হয়েছে এখানে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও ব্রায়ান মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলে। যা এখনও বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি হিসেবে টিকে আছে।
১৯৭৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আতিথ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের। এরপর থেকেই ক্রিকেটের সবচেয়ে বড়বড় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে। আসন্ন বিশ্বকাপে পুনে- ধর্মশালার মতো পাঁচ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ২০ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান, ২৬ অক্টোবর ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা, ৪ নভেম্বর নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান, ৯ নভেম্বর নিউজিল্যান্ড- শ্রীলঙ্কা ও ১২ নভেম্বর ভারত-নেদারল্যান্ডস।
একানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম- লখনৌ
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৫৫ হাজার
ভারতের ১০ম প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর নামানুসারে নামকরণ করা হয় উত্তর প্রদেশের এই স্টেডিয়ামের। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ভারত ও উইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি দিয়ে এই মাঠের পথচলা শুরু হয়। ভেন্যুটি আইপিএলের দল লখনৌ সুপার জায়ান্টস ও উত্তর প্রদেশ রাজ্য ক্রিকেট দলের ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ১২ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৬ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা, ২১ অক্টোবর নেদারল্যান্ডস-শ্রীলঙ্কা, ২৯ অক্টোবর ভারত-ইংল্যান্ড ও ৩ নভেম্বর নেদারল্যান্ডস- আফগানিস্তান।
চিন্দাবরাম স্টেডিয়াম- চেন্নাই
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৩৮ হাজার
চিন্দাবরাম স্টেডিয়াম অবস্থিত চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচের পাশে। যে সমুদ্র সৈকতকে ধরা হয় বিশ্বের জন্যতম দৈর্ঘ্য সমুদ্র সৈকত। এই মাঠের আরেকটি নাম আছে চিপাক। সাধারণত এখানে স্পিন বান্ধব উইকেট হয়ে থাকে। ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেডিয়াম পূর্বে পরিচিত ছিল মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ড নামে।
২০১১ বিশ্বকাপের আগে এই মাঠের ব্যপক সংস্কার হয়। ফলে মাঠের সুবিধা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। আইপিএলের দল চেন্নাই সুপার কিংস ঘরের মাঠ হিসেবে এটি ব্যবহার করে। বিশ্বকাপে এই মাঠেও হবে ৫ ম্যাচ।৮ অক্টোবর ভারত-অস্ট্রেলিয়া, ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড, ১৮ অক্টোবর নিউজিল্যান্ড- আফগানিস্তান, ২৩ অক্টোবর পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও ২৭ অক্টোবর পাকিস্তান- দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম- মুম্বাই
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৩৩ হাজার
ভারতের অন্যতম আইকনিক স্টেডিয়াম ধরা হয় ওয়াংখেড়েকে। এই মাঠকে বলা হয়ে থাকে ‘ক্রিকেট ক্যাপিটাল’। ২০১১ সালের ২ এপ্রিল মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ১৯৮৩ সালের পর ফের শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ভারত।
আজ থেকে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে ২১ অক্টোবর খেলবে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা, ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা, ২ নভেম্বর ভারত-শ্রীলঙ্কা, ৭ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান ও বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ১৫ নভেম্বর গ্রুপ পর্বের ১ম-গ্রুপ পর্বের চতুর্থ।
অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম- নয়া দিল্লি
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৫৫ হাজার
ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়াম নামে পরিচিত ছিল মাঠটি। ১৮৮৩ সালে স্থাপিত স্টেডিয়ামটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম স্টেডিয়াম। প্রথমটি কলকাতার ইডেন গার্ডেনস। স্টেডিয়ামটির মালিকানায় আছে দিল্লি ও জেলা ক্রিকেট এসোসিয়েশন। তিনবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে দিল্লি। ১৯৮৭, ১৯৯৬ ও ২০১১ সালের প্রতিটি আসরেই ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে এই স্টেডিয়াম।
বিশ্বকাপে এই স্টেডিয়ামে মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি দিবারাত্রির। আছে স্বাগতিক ভারতের ম্যাচও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে স্বাগতিকরা। আবহাওয়া নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা এই স্টেডিয়ামে। বৃষ্টি মৌসুম ছাড়া দিল্লিতে বছরের অন্য সময় তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৭১৪ মিমি।
বিশ্বকাপে ৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা, ১১ অক্টোবর ভারত-আফগানিস্তান, ১৫ অক্টোবর ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান, ২৫ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া-নেদারল্যান্ডস, ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা খেলবে দিল্লিতে। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস এই মাঠকে ব্যবহার করে থাকে।
নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম- আহমেদাবাদ
দর্শক ধারণক্ষমতা- ১ লাখ ৩২ হাজার
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম আকার এবং দর্শক ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বকাপের সর্ব বৃহৎ। এই মাঠেই এবার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনালসহ মোট ৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে রয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার হাই ভোল্টেজ ম্যাচও। আছে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান ম্যাচ।
আহমেদাবাদে এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ৫ অক্টোবর, ভারত বনাম পাকিস্তান (১৪ অক্টোবর), ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া (৪ নভেম্বর), দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম আফগানিস্তান (১০ নভেম্বর) ও ফাইনাল (১৯ নভেম্বর)। এর আগে এই স্টেডিয়ামে ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১ সালের বিশ্বকাপের বেশ কিছু ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ইডেন গার্ডেন্স- কলকাতা
দর্শক ধারণক্ষমতা- ৬৮ হাজার
ইডেন গার্ডেন্স ভারতের অন্যতম পুরাতন স্টেডিয়াম। কলকাতায় এই মাঠে একশোটিরও বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালও। সেই সঙ্গে নানা কারণে বিশ্ব ক্রিকেটে এই মাঠের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে।
ইডেন গার্ডেনসে এবারের বিশ্বকাপে ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস, ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ-পাকিস্তান, ৫ নভেম্বর ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, ১১ নভেম্বর ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ও বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল-
১৬ নভেম্বর গ্রুপ পর্বের ২য়-গ্রুপ পর্বের ৩য় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০
Discussion about this post