নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর রেকর্ড অষ্টম ফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। প্রথম ফাইনালে যাওয়ার অপেক্ষা আরেকটু বেড়েছে প্রোটিয়াদের। আজ কলকাতায় অজিদের জয় ৩ উইকেটে। আগামী ১৯ নভেম্বর ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত।
ক্যালেন্ডারের হিসেবে বিশ বছর পর আবার ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দু’দল। রিকি পন্টিংয়ের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে সেদিন ৩৫৯ রান করে আগে ব্যাট করা অজিরা। জবাবে ২৩৪ রানে থেমে যায় ভারত। অস্ট্রেলিয়া জেতে তাদের তৃতীয় শিরোপা।
২১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পায় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিং জুটিতেই ৬০ রান তোলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। মাত্র ৬ ওভারেই তারা ৬০ রানের জুটি গড়েন। তাদের উড়ন্ত সূচনা পাওয়া জুটি ভাঙেন অ্যাইডেন মার্করাম। ১৮ বলে ২৯ রান করা ওপেনার ওয়ার্নারকে বোল্ড করেন এই ডান হাতি অফ স্পিনার। তিনে নেমে কোন রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো মিচেল মার্শ। রাবাদার বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন ভ্যান ডার ডুসেন। ৬১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদে পড়ে অজিরা।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৫ রানের জুটি গড়েন স্মিথ ও হেড। এক প্রান্ত আগলে রেখে অর্ধশতক তুলে নেন হেড। তবে বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। কেশব মাহারাজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ৬২ রানে বোল্ড হন হেড। ১৪ ওভারে একশো পেরোয় অজিরা। এরপর মার্নাশ লাবুশেনকেও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে দেয়নি প্রোটিয়া বোলাররা। তাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাব্রাইজ শামসি। অজিদের ব্যাটিং ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে ফর্মের তুঙ্গে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আউটের মাধ্যমে। মাত্র ১ রান করেই শামসির বলে বোল্ড হন তিনি। এরপর স্টিভ স্মিথ ৬২ বলে ৩০ রান করে আউট হলে ১৭৪ রানে ৬ উইকেট হারালে ম্যাচ ঝুঁকে পড়ে প্রোটিয়াদের দিকে।
যদিও তখন ক্রিজে ছিলেন জস ইংলিস। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে জেরাল্ড কোয়েটজের দুর্দান্ত এক ইয়োর্কারে বোল্ড হন এই ব্যাটার। অজিরা তখন জয় থেকে মাত্র ২০ রান দূরে। উত্তেজনার বারুদ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইডেন গার্ডেনস থেকে পুরো বিশ্বে। তবে শেষ দিকে আর অঘটন ঘটতে দেননি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক। ঠাণ্ডা মাথায় দলকে ফাইনালে নিয়ে যান তারা। প্রোটিয়াদের হয়ে শামসি ও কোয়েটজে দুটি করে উইকেট পান। রাবাদা, মার্করাম ও মাহরাজ ১টি করে উইকেট নেন।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৪ রানে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটারকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া শিবিরে প্রথম ধাক্কা লাগে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ফিরলে। তিনি শূন্য করে ফিরে যান। এরপর কুইন্টন ডি কক ১৪ বলে মাত্র ৩ রান করে সাজঘরে হাঁটা দেন। পরে মার্করাম ১০ ও তিনে নামা রেসি ফন ডার ডুসন ৬ রান করে আউট হন। ডেভিড মিলারকে নিয়ে দেখেশুনে ব্যাট করতে থাকেন হেনরিখ ক্লাসেন। ১৪তম ওভারে বৃষ্টির হানা দিলে ম্যাচ বন্ধ হয়। বৃষ্টি থামার পর মিলার ও ক্লাসেন মিলে বিপর্যয় সামাল দেন। ৯৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার।
দলীয় ১১৯ রানে ৪৮ বলে ৪৭ রান করে আউট হন ক্লাসেন। তার বিদায়ের পর ফিরে যান মার্কো জানসেনও। এরপর ক্রিজে আসা কোয়েটজে নিয়ে ৫২ রানের জুটি গড়েন মিলার। দলীয় ১৭২ রানে ৩৯ বলে ১৯ রানে আউট হন কোয়ের্টজে। ক্রিজে এসেই ফিরে যান কেশব মহারাজ। একপ্রান্তে উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্ত আগলে রেখে ১১৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মিলার। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেই আউট হন তিনি। ১১৬ বলে ১০১ রান করেন মিলার। শেষ ব্যাটার হিসেবে কাগিসো রাবাদা আউট হলে ২ বল বাকী থাকতে ২১২ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স।
Discussion about this post