স্পোর্টস ডেস্ক:: পরপর তিন উইকেট নিয়ে জয়ের পথ আগেই পরিস্কার করে রেখে ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারে হাসান মাহমুদ দুই উইকেট তুলে নেন। ৪ রানের রুদ্ধশ্বাস এক জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের করা ২৭৪ রানের জবাবে খেলতে নামা আয়ারল্যান্ড লড়াই করেছে শেষ ওভার পর্যন্ত। শেষ বলে ৬ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি দলটি। এক সময় মনে হচ্ছিলো আয়ারল্যান্ডই জিতে যাবে। ৩০ বলে ৩৫ রান, হাতে ছিলো বেশ কয়েকটি উইকেট। কিন্তুু দুর্দান্ত রূপে প্রত্যাবর্তন করা মুস্তাফিজ পরপর তিন উইকেট তুলে নিলে ম্যাচটা চলে আসে বাংলাদেশের হাতে।
তারও আগে টাইগারদের কাজ সহজ করে দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেট পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। ৪২ত্ম ওভারে তার ব্রেক থ্রুর পরই ম্যাচে ফিরে তামিমের দল। ফর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় থাকা মুস্তাফিজ বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে সব সমালোচনার জবাবও দিলেন।
২৭৫ রানের টার্গেটে খেলতে নামা আয়ারল্যান্ড ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলেই হারায় প্রথম উইকেট। দলীয় ১৭ রানে আইরিশদের প্রথম উইকেট তুলে নিয়েছেন মু্স্তাফিজ। সাজঘরে ফিরেছেন ওপেনার স্টিফেন ডোহেনী। ১৬ বলে ৪ রান করেছেন এই ওপেনার। এরপরই দ্বিতীয় উইকেটে ১০৯ রানের জুটি গড়েন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি ও পল স্টার্লিং।
ইনিসের ২৭তম ওভারের প্রথম বলে এবাদতের শিকারে ব্রেক থ্রু পায় টাইগাররা। দলীয় ১২৬ রানে আইরিশ অধিনায়ককে সাজঘরে পাঠান তিনি। ছয় চারে ৭৮ বলে ৫৩ রান করেন বালবার্নি।
তৃতীয় উইকেটে পল স্টার্লিং ও হ্যারি ট্যাক্টর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় ছিলেন। ইনিংসের ৩২তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজ থামিয়ে দেন স্টার্লিংকে। চার চার ও দুই ছয়ে ৭৩ বলে ৬০ রান করে এই ব্যাটারকে মৃত্যুঞ্জয়ের হাতবন্দী করান তিনি।
চতুর্থ উইকেটে আইরিশরা জুটি গড়ে জয়ের পথেই এগুচ্ছিলো। মুস্তাফিজ, মিরাজ, এবাদত, মৃত্যুঞ্জয়রা যখন উইকেট শিকারে ব্যর্থ অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৪২তম ওভারে বল তুলে দেন শান্তর হাতে। তিনিও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন। ট্যাক্টরকে ফিরিয়ে ভেঙে দেন আইরিশদের ৭৯ রানের জুটি। ৪৫ রান করা ট্যাক্টরকে লিটনের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
পরের ওভারে বল হাতে দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন মুস্তাফজি। ট্যাক্টরের বিদায়ের পর উইকেটে আসা চ্যাম্পারকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন এই পেসার। দলীয় ২২৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটও হারালো আইরিশরা। ৪ বলে ১রানে ফিরেছেন চ্যাম্পার।
চ্যাম্পারের বিদায়ের পর উইকেটে আসা জর্জ ডকরেলও তীতু হতে পারেননি। মুস্তাফিজকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তাকেও। ৪৫তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২৩৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় আইরিশরা। ৫ বলে ৩ রানে কাটার মাস্টারের শিকার হন ডকরেল। দুর্দান্ত মুস্তাফিজ এরপর তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরিয়ান লরকান টাকারের উইকেট। ইনিংসের ৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২৪২ রানের মাথায় ৫০ রান করা টাকারের স্ট্যাম্প উপরে ফেলেন। চার চার ও এক ছক্কায় ৫৩ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান এই হাফ সেঞ্চুরিয়ান। এরপর শেষ হয়ে যায় আইরিশদের জয়ের স্বপ্ন। শেষ ওভারে ১০ বলে ২০ রান করা মার্ক অ্যাডায়ার ও ৪ রান করা ম্যাকব্রাইনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন হাসান মাহমুদ।
বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজ ১০ ওভারে এক মেডেনে ৪৪ রানে ৪টি, হাসান মাহমুদ ৯ ওভারে ৪৪ রানে ২টি করে উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও এবাদত, শান্ত, মিরাজরা ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৭৪ রানে। ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিক-মিরাজ তিনশো ছাড়ানোর আশা দেখালেও মার্ক অ্যাডায়ারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তা আর হয়নি। ।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১৮ রানেই প্রথম উইকেট হারায়। ১৪ বলে ৪ রানে সাজঘরে ফিরেন অভিষিক্ত রনি তালুকদার। তার বিদায়ের পর ইনিংসের ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৬৭ রানের মাথায় শান্ত প্যাভেলিয়নে ফিরেছেন। সাত চারে ৩২ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে শান্ত গড়েন ৪৯ রানের জুটি।
শান্তর বিদায়ের পর উইকেটে আসা লিটন দাসও খেলতে পারেননি বড় ইনিংসে। তামিমের সাথে ৭০ রানের জুটি গড়েন তিনি। দলীয় ১৩৭ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেটে তাকে প্যাভেলিয়নে ফেরত পাঠান ম্যাকব্রাইন। ইনিংসের ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ফেরার আগে ৩৯ বলে ৩৫ রান করেন তিনি। তিন চার ও এক ছক্কায় সাজানো ছিলো তার ইনিংস।
এরপর উইকেটে আসা আগের ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান তাওহীদ হৃদয়ও দ্রুত ফিরেন সাজঘরে। ইনিংসের ২৮তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৫৯ রানের মাথায় ডকরলে উপরে ফেলেন তার স্ট্যাম্প। এক বাউন্ডারিতে ১৬ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
হৃদয়ের বিদায়ের পর অধিনায়ক তামিমও ফিরেন সাজঘরে। তবে তার আগেই দারুণ এক অর্ধশতক হাঁকান তিনি। ফর্ম নিয়ে সমালোচনায় থাকা ওয়ানডে অধিনায়ক ৮২ বলে ৬৯ রানের ইনংস খেলেছেন। ছয় বাউন্ডারিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন রানে ফেরার। দলীয় ১৮৬ রানে পঞ্চম উইকেটে ডকরেল ফেরত পাঠান টাইগার দলপতিকে।
ষষ্ট উইকেটে মুশফিক-মিরাজের ৭৫ রানের জুটি ভেঙে ম্যাকব্রাইন ঝড়ের শুরুটা করেন। ইনিংসের ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিকুর রহিমকে দলীয় ২৬১ রানে সাজঘরে পাঠান আইরিশ এই বোলার। এরপরই বাংলাদেশ অলআউট ৪৮.১ ওভারে ২৭৪ রানে। ব্যক্তিগত ৪৫ রানে এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন মুশি। তিন চার ও এক ছক্কায় ৫৪ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। তার বিদায়ের পরই ধ্বস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে। ইনিংস শেষ করতে পারেনি টাইগাররা।
মুশফিকের বিদায়ের পরের ওভারের তৃতীয় বলেই, অর্থাৎ ৪৭তম ওভরের তৃতীয় বলে দলীয় ২৬৭ রানে মিরাজকে প্যাভেলিয়নে পাঠান মার্ক অ্যাডায়ার। তার বিদায়ে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদশ। পরের ওভারেরও তৃতীয় বলে উইকেট হারায় তামিমের দল। দলীয় ২৭১ রানে রানআউটের শিকার হাসান মাহমুদ। ২ বলে ১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। শুন্য রানে ফেরেন মুস্তাফিজুর রহমান, ৮ রানে অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও প্যাভেলিয়নের পথ ধরেন। এবাদত ১ রানে থাকেন অপরাজিত। বাংলাদেশ শেষ ২৭৪ রানে।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে মার্ক অ্যাডায়ার ৪টি, অ্যান্ডু ম্যাকব্রাইন ও জর্জ ডকরেল ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০
Discussion about this post