নিজস্ব প্রতিবেদক:: সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে এর আগে কোনো দলই ৩০০ রানের বেশি তাড়া করতে জিততে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সর্বোচ্চ ২৯৪ রান তাড়া করে জিতেছে, সেটিও আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সিরিজের শেষ ম্যাচে জিততে হলে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড করতে হতো ক্যারিবিয়ানদের। সেটাই করলো দলটি। ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছে। আর দশ বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ধবল ধোলাই করেছে দলটি্
আমির জাঙ্গুর শতক, কেসি কার্টি শতক ছুঁই ছুঁই ইনিংসে বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য ২৫ বল হাতে রেখেই ছয় উইকেট হারিয়ে টপকে গেছে স্বাগতিকরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৯ রানে ওপেনার ব্রেন্ডন কিংকে হারায় স্বাগতিকরা। ব্যক্তিগত ১৫ রানে সাজঘরে ফিরেন তিনি। কিং রানআউটের পরই আথানেজকে ফিরিয়ে দেন নাসুম। দলীয় ২৯ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। ৭ রান করেন এই ওপেনার। এরপরই হাসান মাহমুদ তুলে নেন স্বাগতিক অধিনায়ককে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ককে হারায় উন্ডিজ।
এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়ানরা। চতুর্থ উইকেটে কেসি কার্টি রেদারফোর্ডকে নিয়ে ৫৫ রানের জুটি গড়েন। ৩৩ বলে ৩০ রানে রেদারফোর্ড ফিরে গেলে ভাঙে সেই জুটি। পঞ্চম উইকেটে কেসি কার্টি ও জঙ্গু ১৩২ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ছিটকে দেন ম্যাচ থেকে। ইনিংসের ৩৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কেসি কার্টি দলীয় ২১৮ রানে ফিরে গেলেও অবিচল থাকেন জঙ্গু। দশ চার ও দুই ছক্কায় ৮৮ বলে ৯৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন কার্টি। জঙ্গু শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১০৪ রানে। ৮৩ বলের ইনিংস সাজিয়েছেন ছয় চার ও চারটি ছয়ে। তার সঙ্গে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন মোতি।
বাংলাদেশের হয়ে রিশাদ ২টি, তাসকিন, নাসুম ও হাসান মাহমুদ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে ক্যারিবিয়ান দ্বীপে সৌম্য, মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ-জাকেরদে জ্বলে উঠার দিনে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ৩২১ রান। টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ সৌম্য-মিরাজদের ব্যাটে দুর্দান্ত শুরু করে। দু’জনের হাফ সেঞ্চুরির পর ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তরুণ জাকের আলী অনীকরা।
সেন্ট কিটসে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিলো হতাশার। পরপর ফিরে যান ওপেনার তানজীদ তামিম আর লিটন দাস। দলীয় ৯ রানে তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে শুন্য রানে তামিমে বিদায়ের পর চতুর্থ বলে শুন্য রানে লিটনের বিদায়ে শুরু বাংলাদেশের। এরপরই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। তৃতীয় উইকেটে সৌম্য মিরাজের ১৩৬ রানের জুটি। বিপর্যয়ে শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশের রান উৎসব। দু’জনেরই ফিফটি। সৌম্যের স্বরূপে ফিরে আসা। স্বাগতিক বোলারদের হতাশ করে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা। দু’জনের জুটিতে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় দেড়শোর কাছাকাছি। এরপরই সৌম্যের বিদায়ে ভাঙে তাদের জুটি। ইনিংসের ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে সৌম্য ফিরে প্যাভেলিয়নে। ততোক্ষণে বাংলাদেশের স্কোর ১৪৫ রান। ছয় চার আর চার ছক্কায় ৭৩ বলে সৌম্যের ঝলমলে ৭৩ রানের ইনিংসে।
চতুর্থ উইকেটে মিরাজ আফিফকে নিয়ে এগিয়ে চলছিলেন। হঠাৎ ছন্দপতন। তাদের জুটির ২৬ রানের পরই মিরাজের বিদায়। দলীয় ১৭১ রানে ইনিংসের ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলে মিরাজ ফিরেন সাজঘরে। তার আগে ৭৩ বলে ৭৭ রানের দারুণ এক লড়াকু ইনিংস। আট চার ও দুই ছক্কার ইনিংসের কাটা পড়ে মিরাজের রানআউটে। তার বিদায়ের পর কোনো রান তুলার আগেই আফিফের বিদায়ে কিছুটা শঙ্কা জাগে। ৩১তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ১৫ রানে আফিফ ফিরেন ড্রেসিং রুমে।
পরের গল্পটা অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর তরুণ জাকের আলী অনীক। দু’জনে মিলে শাসন করতে থাকেন ক্যারিবিয়ান বোলারদের। একের পর এক বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের স্কোরকে নিয়ে যান তিনশোর ওপারে। তাদের পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে তুলে ১৫০ রান। বাংলাদেশ থামে ৫ উইকেটে ৩২১ রানে। বয়স হলেও মাহমুদউল্লাহ যে ফুরিয়ে যান সেটা আরাে একবার দেখালেন এই সিরিজে। ৬৩ বলে ৮৪ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলে যে তিনি অপরাজিত। সাত চার আর চার ছক্কার ইনিংসে কী ছিলো না? অভিজ্ঞ রিয়াদের দিনে তরুণ জাকের আলী অনীক কম যাননি। ৬২ রানে অপরাজিত থেকেছেন তিনিও। ৫৭ বলের ইনিংস সাজিয়েছেন পাঁচ চার আর দুই ছক্কা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আলজারি জোসেফ দু’টি উইকেট লাভ করেছেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০