নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ‘ফিয়ারলেস ক্রিকেট’, ‘পাওয়ার ক্রিকেট’ এসব নিয়মিত শোনা যেতে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের খেলা আসলেই। তবে কাগজে-কলমে কার্যকর হতো খুব কমই। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে এবার বিপরীত চিত্র। শুরুর তত্ত্বগুলো মাঠে করিয়ে দেখিয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল।
ইংলিশদের বিপক্ষে ৬ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে টাইগাররা। ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসানরা। আর এতেই ইংলিশদের দেওয়া ১৫৭ রানের লক্ষ্য দুই ওভার হাতে রেখেই টপকে গেছে স্বাগতিকরা।
সাগরিকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ দল। লিটন দাস ও রনি তালুকদার উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ খেলে তুলেছেন ৩৩ রান। ৩.৩ ওভার স্থায়ী সেই জুটি ভাঙে আদিল রশিদের বলে রনি তালুকদার বোল্ড আউট হলে। ৮ বছর পর জাতীয় দলে ফেরা রনি ১৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করে যান ২১ রান।
জোর্ফ্রা আর্চারের করা এর পরের ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লিটন দাস। দারুণ শুরু পেলেও, সেটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন লিটন। দলীয় ৪৩ রানের মাথায় এই ওপেনার উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্রিস ওকসের সহজে ক্যাচে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে করেন ১০ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১২ রান।
দারুণ শুরুর পর পাওয়ার প্লে’তে দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে বাংলাদেশ ২ উইকেট হারিয়ে ৫৪ রান সংগ্রহ করে। দুজনে বেশ সামলাচ্ছিলেন ইংলিশ বোলারদের। তবে ১২তম ওভারে হৃদয়ের বিদায়ে ভাঙে শান্তর সাথে ৬৫ রানের ঝড়ো জুটি। মঈন আলির বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে স্যাম কারানের হাতে ধরা পড়েন হৃদয়। নিজের অভিষেক ম্যাচে এই তরুণ করেন ১৭ বলে ২ বাউন্ডারি ও ১ ছয়ে ২৪ রান।
হৃদয় ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই ফিরেছেন শান্তও। ১৩তম ওভারে দ্বিতীয় বলে মার্ক উডের গতির কাছে পরাস্ত হয়ে বোল্ড আউট হয়েছেন। তব এর আগে খেলেছেন ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ৩০ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৫১ রানের ইনিংস। সাগরিকায় ঝড় তুলেছিলেন এদিন ব্যাট হাতে। যে উডের বলে আউট হয়েছেন, সেই তাকেই ইনিংসের সপ্তম ওভারে, যখন সে নিজের প্রথম ওভার করতে এসেছিল, তখন টানা চার বলে চারটি চার হাঁকিয়েছিলেন শান্ত।
বাঁধনহারা ব্যাটিংয়ের পর ফের দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ খানিকটা চাপে পড়লেও, সেটা সামলে নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুজনে আর কোনো উইকেট হারাতে না দিয়েই ১৮তম ওভারে দলের জয় একেবারে নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। ২৪ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন সাকিব। অপরপ্রান্তে আফিফ অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৫ রান করে।
ইংল্যান্ডের হয়ে আর্চার, রশিদ, উড ও মঈন ১টি করে উইকেট লাভ করেন। এদিন ইংল্যান্ড সাত বোলার ব্যবহার করেছেন।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। শুরুটা দারুণ করলেও, পরবর্তীতে সেটি ধরে রাখতে পারেনি দলটি। সফরকারীরা পাওয়ার প্লে’র মধ্যে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫১ রান সংগ্রহ করে। সাগরিকায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক দুই ওপেনার জস বাটলার ও ফিল সল্ট।
পাওয়ার প্লে’র একেবারে শেষ ওভারে প্রথম উইকেটের সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। তবে নাসুম আহমেদের ওভারে দুটি ক্যাচ মিসে সেটি আর সম্ভব হয়নি। ফিল সল্টের প্রথম ক্যাচটি মিস করেন নাসুম নিজে, এরপর সাকিব মিস করেন জস বাটলারের ক্যাচ।তবে স্বাগতিকরা শেষ পর্যন্ত সেই নাসুমের হাত ধরেই প্রথম সাফল্য পায় ম্যাচের দশম ওভারে গিয়ে।
সল্টকে ফিরিয়ে ভেঙেছেন বাটলারের সাথে ৮০ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসুম। এই বাঁহাতি স্পিনার নিজের চতুর্থ ও শেষ ওভারের শেষ বলে কট বিহাইন্ড করে ফেরান সল্টকে। উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন সল্ট, যার ফলে নেন রিভিউ। তবে রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ৩৫ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৩৮ রান করে ধরেন প্যাভিলিয়নের পথ।
উইকেটে এসে বেশি সময় টিকতে পারেননি ডেভিড মালান। ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে সাকিবের শিকার হয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৭ বলে মাত্র ৪ রান করেন তিনি। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদে পড়া ইংলিশদের হয়ে বেন ডাকেটকে সঙ্গে নিয়ে হাল ধরেন বাটলার। তাদের ৪৭ রানের জুটি স্বস্তি দেয় সফরকারীদের। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ১৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২০ রান করা ডাকেটকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মুস্তাফিজুর রহমান।
সেই শুরু ইংল্যান্ডের পতন। পরের ওভারেই প্রথম বলে বাটলারকে ফিরিয়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেন হাসান মাহমুদ। এক প্রান্ত আগলে দারুণ খেলতে থাকা বাটলার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি হাঁকিয়ে ফেরেন ৬৭ রান করে। ৪২ বলের ইনিংসটি সাজান ৪টি করে ছয় ও চারের মারে। আগের দুই ওভারে ২১ রান খরচ করা হাসান মাহমুদ ইনিংসের ১৭তম ও নিজের তৃতীয় ওভারে খরচ করেন মাত্র ১ রান। সঙ্গে বাটলারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটে ম্যাচের চিত্রই পাল্টে যায়।
উইকেটে এসে স্যাম কারান, ক্রিস ওকসরা রান করতে পারেননি। ১৯তম ওভারে কারানের উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ৪ রান খরচ করেন হাসান। ইনিংসের শেষ ওভারের শুরুতেই ওকসের উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে বড় রানের হাত থেকে রক্ষা করেন তাসকিন। এই পেসারের সেই ওভার থেকে ৯ রান তুলে নিয়ে দলের রান কোনোমতে দেড়শ পার করেন ক্রিস জর্ডান ও মঈন আলি। মঈন ৭ বলে ৮ ও জর্ডান ৩ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের হয়ে বোলিংয়ে শুরুতে সবাই খরুচে ছিলেন। শেষদিকে এসে লাগাম টেনেছেন নিজেদের। এর মধ্যে ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার হাসান। সাকিব একই রান খরচ করলেও, শিকার করেন ১টি উইকেট। এর বাইরে নাসুম, মুস্তাফিজ ও তাসকিন ১টি করে উইকেট নিয়েছেন। সবাই ৩০’র ওপর রান খরচ করেছেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post