নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দুর্দান্ত আর রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে টাই হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত নারী দলের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে শেষ ওভারে গিয়ে অমীমাংসিত ফলে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ শেষ হয়। দুই দলের স্কোর সমান থাকায় টাই হয় ম্যাচ।
নির্দিষ্ট একটি দলের পক্ষে ফল যাওয়ার জন্য কোনো সুপার ওভারের ব্যবস্থা ছিল না। যার ফলে অমীমাংসিত থাকে ম্যাচ। ১-১ সমতায় শেষ হয় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।
বাংলাদেশের দেওয়া ২২৬ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো ছিল না ভারতের। দলীয় ৩২ রানে দুই টপ অর্ডার ব্যাটারকে হারায় দলটি। তবে তৃতীয় উইকেটে ১০৭ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন স্মৃতি মান্ধানা ও হারলিন দেওল।
স্মৃতির বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। যে স্মৃতিকে মাত্র ১ রানেই আউট করার সুযোগ ছিল, সেই স্মৃতি করেছেন শেষ পর্যন্ত ৫৯ রান ৫ বাউন্ডারিতে। এরপর ছোট ছোট বেশ কয়েকটি জুটিতে এগোতে থাকে ভারত। তবে ধীর গতির রানের পাশপাশি উইকেট হারানো কাল হয় দলটির জন্য।
ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৩ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। হাতে মাত্র এক উইকেট। এমতাবস্থায় মারুফা আক্তারের করা ওভারের প্রথম দুই বলে দুই সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে গেলেও, তৃতীয় বলে মেঘনা সিংকে উইকেটের পেছনে থাক অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ক্যাচে পরিণত করেন মারুফা। আর এতেই বুনোউল্লাসে মাতে বাংলাদেশ দল। অল্পের জন্য জয় আনা যায়নি, সিরিজ জয়ের ইতিহাসও গড়া হয়নি। তবে ভারতকেও জিততে না দিয়ে সন্তুষ্টি টাইগ্রেসদের।
৪৯.৩ ওভারে ২২৫ রানে অলআউট ভারত। দলের পক্ষে ১০৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন হারলিন দেওল। ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন জেমিমাহ রদ্রিগেজ।
বাংলাদেশের হয়ে নাহিদা আক্তার ৩টি ও মারুফা ২টি উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ২২৫ রান সংগ্রহ করে ৫০ ওভারে। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইতিহাস গড়েন ফারজানা হক পিংকি।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা কিছুটা ধীরগতির হলেও, উইকেট না হারানোটা ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ ইতিবাচক। পাওয়ার-প্লেতে স্বাগতিকরা উইকেটশূন্য ৩২ রান সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে দারুণ বোঝাপড়ায় শামীমা-ফারজানা উভয়ই ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন।
৫২ রান করে শামীমা ফিরে যান স্নেহ রানার বলে। ৭৮ বলে ৫ চারে ইনিংস সাজান তিনি। এর মাধ্যমে টাইগ্রেসদের ৯৩ রানের প্রথম উইকেট জুটি ভাঙে। এরপর সেঞ্চুরিয়ান ফারজানার সাথে জুটি গড়েন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ৩৬ বলে ১ চারে ২৪ রান করে জ্যোতি বিদায় নিলে ভাঙে এই জুটি।
৭১ রানের ফারজানা-জ্যোতির জুটি ভাঙার পর দ্রুত ফিরে যান রিতু মনিও (২)। তারপর সোবহানা মোস্তারির সঙ্গে বাকি সময়টা পার করেন ফারজানা। এই দুজনের ব্যাটে ৪৭তম ওভারে দুইশ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরের ওভারের শেষ বলে শেফালি ভর্মার বলে চার মেরে ১৫৬ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান ফারজানা। ডানহাতি ওপেনার ফারজানা থেমেছেন ১০৭ রানে। ইনিংসের শেষ বলে রানআউট হওয়ার আগে ১৬০ বলে তিনি ৬টি চারের বাউন্ডারি খেলেন।
বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে ওয়ানডেতে কোনো ক্রিকেটারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর ইতিহাস গড়েন পিংকি। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই বাংলাদেশ নারী দলের হয়ে সেঞ্চুরি হাঁকানো প্রথম এবং একমাত্র ক্রিকেটার পিংকি। বাংলাদেশের হয়ে অপরপ্রান্তে অপরাজিত ছিলেন সোবহানা। তার ২২ বলে খেলা ২৩ রানের ইনিংসে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
ভারতের হয়ে স্নেহ রানা ২টি উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post