নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো সিলেট স্ট্রাইকার্স। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে আসরের প্রথম তিন ম্যাচের সবগুলোতেই জয়ের দেখা পেলে নবাগত ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। মাশরাফী বিন মোর্ত্তাজার দল জিতেছে ৫ উইকেটের ব্যবধানে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি হাঁকিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়।
এই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে সিলেট। অপরদিকে আসরে টানা দুই হার দেখলো লিটন-ইমরুল-মুস্তাফিজদের কুমিল্লা। আর কোনো পয়েন্ট না পেয়ে এখন তলানিতে অবস্থান বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
কুমিল্লার দেওয়া ১৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী সিলেট। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ১২ রানের মাথায় ফিরে যান পাকিস্তানের মোহাম্মদ হারিস। এই ওপেনার তিন বলে এক ছক্কার মারে ৬ রানেই থেমে যান সিলেটের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের ৪৩ রানের জুটি দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যায়। দলীয় ৫৫ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরেন ওয়ানডেসুলভ ব্যাট করতে থাকা শান্ত। এদিন ২১ বলে দুই বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় করে যান ১৯ রান। তৃতীয় উইকেটে ৩০ রানের জুটি গড়েন হৃদয় ও জাকির হাসান। এদিন খুব বেশি বড় ইনিংস খেলতে পারেননি জাকির। তবে তার ১০ বলে এক বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ২০ রানের ইনিংসটিও মূল্যবান ছিল।
চতুর্থ উইকেটে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের সাথে হৃদয়ের ৪২ রানের জুটি সিলেটের জয়ের পথ সুগম করে দেয়। টানা দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে হৃদয় ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। তবে এর আগে ৩৭ বলে তিন চার ও চার ছক্কায় খেলে যান ৫৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। শেষ দিকে থিসারা পেরেরা আউট হলেও, সিলেটকে জয়ের জন্য খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ২৫ বলে দুই বাউন্ডারিতে ২৮ রানের ইনিংস ভর করে ১৪ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স।
কুমিল্লার হয়ে মোহাম্মদ নবি ও খুশদিল শাহ ২টি করে উইকেট শিকার করেন। আবু হায়দার রনি লাভ করেন ১ উইকেট।
এর আগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রানের পুঁজি পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শুরুটা ভালো হলেও, খেই হারিয়ে ফেলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। স্কোরবোর্ডে রান থাকলেও, পাওয়ার প্লে’তে হারিয়ে ফেলে তিন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ছয় ওভার শেষে কুমিল্লার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৭ রান।
ইনিংসের প্রথম ওভারে শুরুটা দারুণ করেন লিটন দাস। থিসারা পেরেরার করা ওভারের প্রথম তিন বলে দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভালো শুরুর জানান দেন। কিন্তু অতি আক্রমণাত্বক হতে গিয়ে করে বসেন ভুল। চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে মোহাম্মদ হারিসের হাতে। প্রথম ম্যাচে ১০ রান করার পর এই ম্যাচে ৮ রান করেই প্যাভিলিয়ন ফেরেন দেশসেরা এই ব্যাটার।
লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে এসে সৈকত আলিও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন। অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তাজার করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে পরপর তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে কুমিল্লা শিবিরে স্বস্তি আনেন। এর আগে মোহাম্মদ আমিরকেও হাঁকান বাউন্ডারি। কিন্তু ইমাদ ওয়াসিমের করা পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলেই, বোল্ড আউট হয়ে কুমিল্লার চাপ বাড়িয়ে দেন সৈকত। যথন ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন, তার নামের পাশে ১২ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২০ রান।
এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। তবে তিনি সুবিধা করতে পারেননি। বাঁহাতি এই ব্যাটার পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে আমিরের বলে এক ক্যাচ তুলে দেন। সহজ সেই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি আকবর আলি। আমিরের শিকারে পরিণত হয়ে ২ বলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই তারকা।
তিন উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপদে, তখন হাল ধরেন ওপেনার ডেভিড মালান ও জাকের আলি অনিক। দুজনে চতুর্থ উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়ে দলকে স্বস্তি এনে দেন। ওয়ানডেসুলভ ব্যাটিংয়ে ৩৯ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩৭ রান করে মালান ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। যার মূল কারিগর থিসারা পেরেরা।
মালান ফিরলেও, দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দিয়েই মাঠ ছাড়েন জাকের। ২৪ বছর বয়সী এই ব্যাটার স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে নিজের তৃতীয় ফিফটি হাঁকান। ৪৩ বলে দুই বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ৫৭ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মোহাম্মদ নবী নামলেও, ক্যামিও কিছু করে দেখাতে পারেননি। যার ফলে দেড়শ’র আগেই থামে কুমিল্লার ইনিংস।
সিলেটের হয়ে ৪ ওভারে ২২ রানে আমির ২টি ও পেরেরা ৪ ওভারে ২৬ রানে ২টি করে উইকেট শিকার করেন। ১টি করে উইকেট লাভ করেন মাশরাফী ও ইমাদ ওয়াসিম।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post