নিজস্ব প্রতিবেদক:: লক্ষ্য ২৩৫ রান। জয়ের জন্য ব্যাট করতে নামা থাকা বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২৫.৫ ওভারে তিন উইকেটে ১২০ রান। হাতে থাকা সাত উইকেট নিয়ে যেখানে অনায়াসে জেতার কথা, বাংলাদেশ গুটিয়ে গেলো আরো ২৩ রান যুগ করতেই। দুর্দান্ত গজানফর-রশীদ খানরা বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিলেন ১৪৩ রান। ৯২ রানের বড় জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে লিড নিলো আফগানিস্তান।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারলো সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।, দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। অথচ শুরুটা মোটামুটি ভালোই করেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তুু দুর্দান্ত হয়ে উঠা আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফারের স্পিন ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিক, রিয়াদ, সৌম্য, হৃদয়, মিরাজদের ব্যর্থতায় শারজাহতে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হলো হার দিয়েই।
ইনিংসের শুরুতেই বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ তামিমকে হারিয়ে শুরু করে। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১২ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফারের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৫ বলে করেন ৩ রান। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মোটামুটি প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। শান্তকে নিয়ে সৌম্য সরকার গড়েন ৫৩ রানের জুটি। ইনিংসের ১২তম ওভারের শেষ বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের শিকারে দলীয় ৬৫ রানে সৌম্যের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ৪৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংসে সৌম্য বাউন্ডারি হাঁকান চারটি।
সৌম্যের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্ত মিরাজকে নিয়ে গড়েন ৫৫ রানের জুটি। বাংলাদেশও দেখছিলো ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন। ৩৬তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১২০ রানে শান্তর বিদায়ে শুরু বাংলাদেশের বিপর্যয়। চার চার ও দুই ছক্কায় ৬৮ বলে ৪৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপরই কেবল আসা-যাওয়ার খেলা। দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের প্রদশর্নী।
শান্তের বিদায়ের পর মিরাজও বেশিক্ষণ আর টিকতে পারেননি। ইনিংসের ৩১তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১৩২ রানেই প্যাভেলিয়নের পথ ধরেন তিনি। করেন ৫১ বলে ২৮ রান। ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটিও হাঁকান তিনি। এরপর গজানফারের তোপে পড়া বাংলাদেশ আর লড়াই করতে পারেনি। হৃদয়ের ১১, মাহমুদউল্লাহর ২, মুশফিকের ১ ও রিশাদের ১ রানে বাংলাদেশ শেষ ৩৪.৩ ওভারে ১৪৩ রানে ।
আফগানিস্তানের হয়ে আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফার একাই শিকার করেন ৬টি উইকেট, দু’টি উইকেট নেন রশিদ খান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা আফগানিস্তান মোহাম্মদ নবী ও হাসমতউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরিতে ইনিংসের দুই বল আগে অলআউট হয় ২৩৫ রানে। তাসকিন-মুস্তাফিজরা দুর্দান্ত বোলিং করে চাপে ফেলে দেন আফগানদের। ৩৫ রানর মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে হাসউল্লাহর দল। ৭১ রানে অর্ধেক উইকেট হারানো আফগানরা অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদী ও মোহাম্মদ নবীর ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৭ রানের মাথায় ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে সাজঘরে ফেরত পাঠান তাসকিন আহমদ। ৫ রান করেন এই ওপেনার। তিনে নামা রহমত শাহকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৩০ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় দলটি। ১৩ বলে ২ রান করেন রহমত শাহ। মুস্তাফিজের জোড়া শিকারে এরপর সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার সাদিকুল্লাহ আটাল। দলীয় ৩৫ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা। ৩০ বলে ২১ রান করেন এই ওপেনার।
টানা দুই উইকেট শিকার করা মুস্তাফিজ এরপরও থামেননি। তুলে নেন তৃতীয় উইকেট। এবার দলীয় ৩৫ রান চতুর্থ উইকেট হারায় হারায় আফগানিস্তান। ইনিংসের দশম ওভারের পঞ্চম বলে তিন বল খেলা আজমতউল্লাহ ওমরজাই রানের খাতা খুলার আগেই ফিরে যান সাজঘরে। পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন গুলবাদিন নাইব ও হাসমতউল্লাহ শহিদী। তাদের ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন। ইনিংসের ২০তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৭১ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ৩২ বলে ২২ রান করে আউট হন গুলবাদিন।
ষষ্ট উইকেটে শত রানের জুটি গড়ে দলের সংগ্রহকে বড় করেন মোহাম্মদ নবী ও হাসমতউল্লাহ শহিদী। ইনিংসের ৪১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহিদীকে ফিরিয়ে ১০৪ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন। হাফ সেঞ্চুরিয়ান হাসমতউল্লাহ ৯২ বলে দুই চারে করেন ৫২ রান। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে নবী ব্যাট করতে থাকেন। খেলেন ৮২ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। ৪৮তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ২১৯ রানের মাথায় তাসকিন থামান থাকে। ৭৯ বলের ইনিংস সাজিয়েছেন চার চার ও তিন ছক্কায়। মাঝে সপ্তম উইকেটে রশীদ খান ফিরে যান ১০ রান করে। শেষ দিকে নানগেয়ালিয়া খারোতে ২৮ বলে হার না মানা ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে আফগানিস্তান ৪৯.৪ ওভারে অলআউট হয় ২৩৫ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ও মুস্তাফিজ চারটি করে ও শরিফুল একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০