নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই পর্দা উঠছে দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশম আসর। শুক্রবার দেশের সবচেয়ে বড় ঘরোয়া ক্রিকেট আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও নবাগত ফ্র্যাঞ্চাইজি দুর্দান্ত ঢাকা। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে একই মাঠে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুখোমুখি হবে গেল আসরের রানার্স-আপ সিলেট স্ট্রাইকার্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে আধা ঘন্টার একটি ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছে। বড় পরিসরে কিছু করার চেষ্টা থাকলেও, জাতীয় নির্বাচনের কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি।
এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া সাত দল হলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, সিলেট স্ট্রাইকার্স, রংপুর রাইডার্স, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স ও দুর্দান্ত ঢাকা। যাদের মধ্যে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে আগমন ঘটেছে ঢাকার।
প্রতিবারের মতো এবারও বিপিএল শুরুর আগে বিতর্ক লেগেই থাকল। আর সেই বিতর্ক উঠেছে লভ্যাংশ ভাগ নিয়ে। আইপিএল, পিএসএলসহ বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দলগুলো রাজস্ব ভাগ পায় মূল আয় থেকে। তবে এরকম কোনো মডেল বা কাঠামো বর্তমানে নেই বিপিএলে। রাজস্ব ভাগ করতে চায় বিসিবি। নিজস্ব দেশীয় মডেলেই চালানোর চিন্তা তাদের।
তবে এসব নিয়ে অসন্তোষ আছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে। বার বার বিপিএলের লভ্যাংশ দাবি করা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কর্ণধার নাফিসা কামাল এবার বেশ সরব হয়েছেন। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, বিপিএলে লভ্যাংশ ভাগ না পেলে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবেন টুর্নামেন্ট থেকে।
বিপিএলে গেল ৯ আসরের মধ্যে ৪ বারই চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। এবারও দেশি-বিদেশি তারকাদের নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ফাইট দেওয়ার মতো দল গঠন করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে অতীতের চেয়ে এবার অর্থ জোগাড় করতে বেশ হিমশিম খেয়েছে কর্তৃপক্ষ। মূলত বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আয় স্পন্সরশিপ নির্ভর। যার ফলে প্রতিবারই স্পন্সর জোগাড় করার দিকে ঝুঁকতে হয় সবাইকে। নানান ঝামেলা তাই লেগেই থাকে।
তবে এখনও নিজেদের দাবিতে অনড় বিসিবি। কোনো লভ্যাংশ ভাগে যাচ্ছে না বোর্ড। দিয়েছে পাল্টা যুক্তিও। লভ্যাংশ ভাগাভাগি হলে, ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি’ও বেড়ে যাবে অনেক গুণ। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সেটি হবে এখন না বলে মনে করেন তারা। এছাড়া অতীতে বিপিএল শুরুর দিকে এমন মডেল ছিল, যেটির অভিজ্ঞতা ভালো নয়।
যদিও এই বিতর্কের মাঝেও এবার ভালো কিছুর ছোঁয়া পাচ্ছে বিপিএল। সাত দলের টুর্নামেন্টে সম্প্রচার আর মান নিয়ে বিতর্কের কিছুটা সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। বিপিএলে প্রাণ ফেরাতে বিসিবি বদলে ফেলেছে অনেক কিছুই। প্রতি বিপিএলের আগে ডিআরএস নিয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও, এবার টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই পাওয়া যাবে এর ব্যবহার। এছাড়া প্রোডাকশন কোম্পানীর নিম্নমানের সম্প্রচার আর দৃষ্টিকটু গ্রাফিক্স থেকেও মুক্তি মিলতে চলেছে।
উন্নত মানের আধুনিক সব ক্যামেরার ব্যবহার দেখা মিলবে। সম্প্রচারে থাকছে ৩৬টি অত্যাধুনিক ক্যামেরা। যার ১৮টির নিয়ন্ত্রণ অপারেটরদের হাতে থাকবে। আর ১৬টি থাকবে স্বয়ংক্রিয়। থাকছে স্পাইডার ক্যাম, রোবট সিস্টেমের ব্যাগি ক্যাম ও ড্রোন ক্যামেরা। ভিডিও কোয়ালিটি থাকবে নূন্যতম চার হাজার রেজুলেশনে। থাকছে জুম লেন্স। যেটায় ১২, ২৪ এমনকি ৯০ গুণ পর্যন্ত ফোকাস করা যাবে।
সম্প্রচারকারীদের শর্ত দেওয়া হয়েছে এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপ মানের গ্রাফিক্স হতে হবে। যার জন্য প্রোডাকশনে কাজ করাদের মধ্যে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ, আইপিএল বা বিগ ব্যাশের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অত্যাধুনিক অডিও মিক্সার বা ভিডিও মিক্সারও থাকছে। ২২ গজের উইকেটে জিং বেল ও এলইডি স্টাম্পস।
ধারাভাষ্যেও থাকছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এবার ৯ সদস্যের ধারাভাষ্য প্যানেল ঘোষণা করেছে বিসিবি। যাদের মধ্যে ৪ জন দেশি ও ৫ জন বিদেশি। আরও একবার বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি স্যার কার্টলি অ্যামব্রোসকে। তবে সবচেয়ে বড় চমক পাকিস্তানের রমিজ রাজা আসবেন। একইসাথে আমির সোহেলকেও দেখা যাবে। শ্রীলঙ্কার রাসেল আর্নল্ডের মতো জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারেরও দেখা মিলবে।
আরও একবার বিপিএলে বিদেশি কমেন্টেটর হিসেবে আসছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এইচ ডি আকারম্যানকে। তাদের সাথে দেশিদের মধ্যে থাকবেন ‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’ খ্যাত আতহার আলী খান, শামীম চৌধুরি, সমন্বয় ঘোষ এবং মাজহার উদ্দীন অমি। ধারাভাষ্যে বৈচিত্র্য আর সম্প্রচারের মানে উন্নতি ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post