নিজস্ব প্রতিবেদক:: আরো একবার ডট বলের খেলা প্রদর্শন করলো টাইগাররা। অর্ধেকের বেশি ডট বল দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দলতো ডুবেছেই, সঙ্গে ডুবিয়েছে পাকিস্তানকেও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে এক সঙ্গে বিদায় হয়েছে এই দুই দলের। বাংলাদেশ-নিউজল্যান্ড ম্যাচটাতে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদেরতো কিছুই করার ছিলো না। কেবল টাইগারদের জয়ের প্রার্থনা ছাড়া।
অথচ নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের হারে সেই পাকিস্তানকেই কাঁদতে হলো। প্রায় তিন বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসির বৈশ্বিক আসর বসেছিলো। পাকিস্তানের ক্রিকেটার, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দর্শকেরা ছিলেন দারুণ উচ্ছ্বসিত। প্রত্যাশা ছিলো দল ভালো করবে, ঘরের মাঠে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে মুগ্ধ হবেন দর্শকেরা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান শিরোপা ধরে রাখবে।
মাত্র এক ম্যাচ হেরেছিলো পাকিস্তান। তাতেই কপাল পুড়েছে তাদের। কপাল পুড়িয়েছে বাংলাদেশই। নাজমুল হোসেন শান্তর দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারলে পাকিস্তানের সম্ভাবনা বেঁচে থাকতো। কে জানে হয়তো আনপ্রেডিক্টেবল দলটি দারুণ কিছু করেও ফেলতো। তবে ডট খেলে বাংলাদেশ নিজেদের সর্বনাশতো করেছেই, উল্টো পাকিস্তানেরও সর্বনাশ ঘটিয়েছে। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখন পাকিস্তানও দর্শক।
৩০০ বলের খেলা। বাংলাদেশ দলকে খেলতো ৩০০ বল। তার মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ডট দিলেন ১৮১ বল। ম্যাচের বেশির ভাগ বলেই কোনো রান নিতে পারেননি শান্ত, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। ১১৯ বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রান করেছেন ২৩৬। অথচ ১২০ বলের টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দুইশো রানও করতে পারেনা। ফরম্যাট বদলে গেলে বাংলাদেশও যেনো ধরণ পাল্টে ফেলে। টেস্ট খেলে ওয়ানডে স্টাইলে আর ওয়ানডে খেলে হারার মেজাজে টি-২০ স্টাইলে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট এলে বাংলাদশকে যেনো খুঁজেই পাওয়া যায় না। ক্রিকেটের ফরম্যাট বুঝতেই যেনো গোলক ধাঁধায় পড়ে যায় বাংলাদেশ দল।
বিশ্ব ক্রিকেটে একটা কথার বেশ প্রচলন আছে। টাইগারদের বলা হয় হয় ডটের রাজা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেটারই প্রদর্শন করলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। রাওয়ালপিন্ডির রান বন্যার উইকেটে মন্থর ব্যাটিংয়ের পর হার ছাড়াতো কোনো উপায় নেই। এমন বড় টুর্নামেন্টে রান উৎসবের উইকেটে ২৩৬ রান করে জেতার কথা নয়, সেটাই হয়েছে।
২৩৭ রানের টার্গেটে খেলতে নামা নিউজিল্যান্ড শুরু করে হতাশা জনক ভাবে। ইনিংসের প্রথম ওভারের ষষ্ট বলে কোনো রান সংগ্রহের আগেই ওপেনার উইল ইয়ং পুরো ওভার খেলে শুন্য রানে প্যাভেলিয়েন ফিরেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১৫ রানে তিনে নামা কেন উইলিয়ামসন সাজঘরে ফিরেন ব্যক্তিগত ৫ রানে। তৃতীয় উইকেটে ডেভন কনওয়েকে নিয়ে রবীন্দ্র ৫৭ রানের জুটি গড়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন। ১৬তম ওভারের চতুর্থ কনওয়ে যখন সাজঘরে ফিরেন, নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৭২। ছয় চারে ৪৫ বলে ৩০ রান করেন কনওয়ে।
সেঞ্চুরিয়ান রাচীন রবীন্দ্র চতুর্থ উইকেটে টম লাথামকে নিয়ে ম্যাচ বের করে নেন বাংলাদেশের মুঠো থেকে। টাইগার বোলারদের শাসন করে দু’জনে মিলে গড়েন ১২৯ রানের জুটি। রিশাদের বলে রবীন্দ্র যখন সাজঘরে ফিরেন নিউজিল্যান্ডের রান তখন ২০১। ১০৫ বলে ১১২ রানের দুর্দান্ত ম্যাচ জয়ী এক ইনিংস খেলেন তিনি। বার চার ও এক ছক্কায় শতকের ইনিংসটি সাজান এই সেঞ্চুরিয়ান। তার বিদায়ের পর হাফ সেঞ্চুরি করা টম লাথাম ফিরেন রানআউটে কাটা পড়ে। ৪২তম ওভারের চতুর্থ বলে তার বিদায়ে কিউরা হারায় পঞ্চম উইকেট। ৭৬ বলে ৫৫ রানের ইনিংসে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন এই হাফ সেঞ্চুরিয়ান। ২১ রানে ফিলিপস ও ১১ রান মিচেল ব্রেসওয়েল অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন, মুস্তাফিজ, রিশাদ ও নাহিদ রানরা একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ খুব একটা খারাপ শুরু করেনি। দু্ই ওপেনার তানজীদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুই ছক্কা আর এক চারে ২৪ বলে ২৪ রান করা ওপেনার তামিম ফিরেন প্যাভেলিয়নে। তিনে নামা মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক শান্ত। তবে বেশিদূর যায়নি সে জুটি। দলীয় ৬৪ রানে মিরাজের বিদায়ে ভাঙে তাদের জুটি। ইনিংসের ১২তম ওভারের শেষ বলে বিদায়ের আগে মিরাজ একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ বলে ১৩ রান করেন।
তৃতীয় উইকেটে হৃদয়কে নিয়ে ৩৩ রানের জুটি গড়েন শান্ত। ইনিংসের ৩১তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৯৭ রানের আগেই বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট। ২৪ বলে ৭ রান করেন হৃদয়। এরপর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে টাইগাররা। শান্ত এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট চালালেও দলের রানের গতি বাড়েনি।
শতরান পেরিয়েই বাংলাদেশ পরপর হারিয়ে ফেলে আরো দু্ই উইকেট। ফিরে যান দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২৩তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১০৬ রানে ব্যক্তিগত ২ রানেই মুশফিক ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ের পর অভিজ্ঞ আরেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হতাশ করেন দলকে। দলীয় ১১৮ রানে, ২৭তম ওভারের প্রথম বলে ৪ রান করা রিয়াদের বিদায়ে ষষ্ট উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে জাকের আলীকে নিয়ে ৪৫ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় এড়ানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক শান্ত। তবে এবার তিনিও ফিরেন। ৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ৭৭ রান করে সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক শান্ত। বাংলাদেশ হারায় ষষ্ট উইকেট। নয় বাউন্ডারির ইনিংসটি শান্ত খেলেন ১১০ বলে। জাকের আলী অনিকের ৪৫ রানে কিছুটা লড়াই করে বাংলাদেশ। ৫৫ বলের ইনিংসে তিন চার ও এক ছ্ক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। দুই চার ও এক ছক্কায় রিশাদের ২৫ বলে ২৬ রানে্র ইনিংসে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে ২৩৬ রানে থামে।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে মিচেল ব্রেসওয়েল চারটি ও র্রুক ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০