নিজস্ব প্রতিবেদক:: লজ্জার হারে সফরকারী সাউথ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এইডেন মার্করামের দল জিতে নিয়েছে ২-০ ব্যবধানে। ঢাকায় সিরিজের প্রথম টেস্ট ৭ উইকেটে জয়ের পর চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্ট সফরকারীরা জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে, ২৭৩ রানে।
বাজে ব্যাটিং, নিষ্প্রাণ বোলিংয়ে বাংলাদেশ দল হেরেছে সাগরিকায়। ব্যাটসম্যান পরপর দুই ইনিংসে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। দায়িত্ব জ্ঞানহীন ব্যাটিং করেছেন। একের পর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন প্রতিপক্ষকে। সাউথ আফ্রিকার এক ইনিংসে করা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ দল দুই ইনিংস মিলিয়ে করতে পেরেছে ৩০২ রান। প্রথম ইনিংসে টাইগাররা অলআউট হয়েছে ১৫৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তার চেয়েও কম। গুটিয়ে গেছে ১৪৩ রানে।
ফলোঅনে পড়ে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো কিছু করে দেখাতে পারেনি। বজায় রেখেছে ধারাবাহিক ব্যাটিং ব্যর্থতা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও আসা যাওয়ার মিছিল করছেন ব্যাটাররা। । ৪১৬ রানে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ে ব্যাট করতে নেমেও শুরুটা চরম হতাশাজনক করে। দলীয় ১৫ রানে, ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে ওপেনার সাদমান ফিরেন প্যাভেলিয়নে। ১৬ বলে করেন ৬ রান। তার বিদায়ের পর আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও ফিরেন দ্রুত। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ২৮ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩১ বলে ১১ রানে ফিরেন জয়।
চারে নামা মুমিনুল হক রানের খাতাই খুরতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে তিনি একাই করেছিলেন ৮২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ বল খেলেও রান সংগ্রহ করতে পারেননি। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৯ রানে তৃতীয় উইকেটে তাঁকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর তিনে নামা জাকির হাসান শান্তকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টায় ছিলেন। চার বিরতির আগে শেষ বলে তিনিও ফিরেন প্যাভেলিয়নে। তার বিদায়ে দলীয় ৪৩ রানে বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। ২৬ বলে ৭ রান করেন তিনি।
এরপর কেবল যাওয়া আসার মিছিল করেছেন ব্যাটসম্যানরা। ৫৫ বলে চার চার ও এক ছক্কায় ৩৬ রান করেছেন অধিনায়ক শান্ত। ২৯ রান করেছেন অঙ্কন। অভিষিক্ত এই ব্যাটার প্রথম ইনিংসে শুন্য রানে ফিরে ছিলেন। ব্যাটসম্যানদের চেয়েও বেশি রান করেছেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশের পেসার ৩৮ রান করে অপরাজিতই ছিলেন। ৬৪ বলের ইনিংসে এক চার ও দুই ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশ ৪৩.৪ ওভারে ১৪৩ রানেই গুটিয়ে গেছে।
প্রোটিয়াদের হয়ে কেশভ মহারাজা ৫টি ও মাথুসামি ৪টি উইকেট লাভ করেছেন।
এর আগে সাউথ আফ্রিকার করা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে মাত্র ১৫৯ রানে। পড়েছে ফলোঅনে। পিছিয়ে আচে ৪১৬ রানে।
প্রতিপক্ষের রান পাহাড়ের জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা মোটেও ভাল করেনি। বল হাতে খারাপের পর ব্যাট হাতে খারাপ শুরু করে টাইগাররা। দলীয় ১০ রানে চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২১ রানের মাথায় প্যাভেলিয়নে ফেরেন তিনি। ৮ বলে করেন মাত্র ২ রান।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ বিপর্যয় সামলানোর বদলে আরো উইকেট হারাতে থাকে। ২১ বলে ১০ রান করে এবার ফিরেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ২৯ রানে প্যাভেলিয়নের পথ ধরেন তিনি। দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামানো হয় হাসান মাহমুদকে। তবে তা কাজে দেয়নি। ৩২ রানে চতুর্থ উইকেটে শেষ বিকেলে তিনিও সতীর্থদের দেখানো পথে হাঁটেন। সপ্তম ওভারের শেষ বলে সাজঘরে ফেরার আগে ৭ বল খেলে করেন ৩ রান।
তৃতীয় দিন আজ সকালে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিদায় অধিনায়ক শান্তর। ইনিংসের ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৪৬ রানের মাথায় ষষ্ট উইকেটে বিদায় তার। সংগ্রহ মাত্র ১৭ বলে ৯ রান। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসা আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমও হতাশ করলেন। ২ বল খেলেও খুলতে পারেননি রানের খাতা। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে নেই বাংলাদেশের ষষ্ট উইকেট। এবার দলীয় রান বেড়েছে ১। দলীয় ৪৭ রানে মুশফিকের বিদায়ের পরের ওভারের প্রথম বলে সাজঘরে মেহেদী হাসান মিরাজও। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৪৮ রানের মাথায় ১ রান করা মিরাজ ফেরত যান প্যাভেলিয়নে।
মিরাজের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিনিও পারেননি রানের খাতা খুলতে। ২ বলে শুন্য রানে রাবাদার শিকারে ফিরে যান প্যাভেলিয়নে। ১৫তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৪৮ রানেই বাংলাদেশ হারায় ৮ উইকেট। এরপরই নবম উইকেটে জুটি গড়েছেন তাইজুল-মিরাজ। তাদের ১০৩ রানের জুটি ভাঙে ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৫১ রানে মুমিনুলের বিদায়ে। চারে নামা এই ব্যাটার মুথুসামির শিকারে পরিণত হওয়ার আগে খেলেন নান্দনিক এক ইনিংস। আট চার ও দুই ছক্কায় ১১২ বলে করেন ৮২ রান। তার লড়াকু ইনিংসেই বাংলাদেশ দেড়শো পার করে।
মুমিনুলের বিদায়ের পর উইকেটে থাকা তাইজুল নাহিদ রানাকে নিয়ে চেষ্টা করেন। তবে পারেননি। ৯ বল খেলা পেসার শুন্য রানেই থাকেন অপরাজিত। ৯৫ বলের ধের্য্যশীল ইনিংসে তাইজুল ৩০ রান করে সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় ১৫৯ রানে।
সাউথ আফ্রিকার হয়ে রাবাদা ৫টি, পিটারসন ও মহারাজা ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে চট্টগ্রাম টেস্টে রানের পাগাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সাউথ আফ্রিকা শুরুটাও ভালো করে। তবে অধিনায়ক নিজে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে মাত্র ৩৩ রান করে তিনি ফিরেন সাজঘরে। ৫৫ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন দু’টি। সফরকারী অধিনায়ক যখন সাজঘরে ফেরেন দলের রান তখন ১৭ ওভার শেষে ৬৯। তাইজুলের শিকারে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে প্রথম উইকেটের দেখা পায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।
প্রথম উইকেট হারানো প্রোটিয়ারা দ্বিতীয় উইকেটে গড়ে রেকর্ড গড়া জুটি। জোর্জি ও স্টাবিস ৩৪২ বলে ২০১ রানের জুটি গড়েন। বাংলাদেশের বোলাররা কেবল বোলিং করেই যেতে থাকেন। একের পর এক ওভার শেষ করছিলেন তারা, আর সফরকারীরা দুই সেঞ্চুরিয়ান সাবলীল ব্যাট করেই যাচ্ছিলেন। নিষ্প্রাণ বোলিংয়ে উইকেট শুন্য থাকতে থাকে স্বাগতিকরা। হাসান মাহমুদ, নাহিদ রাহান, মেহেদী হাসান মিরাজদের যেনো কিছুই করার ছিলো না। উইকেটের আশায় অধিনায়ক শান্ত বল তুলে দেন মুমিনুলের হাতেই। তবুও কোনো কাজ হচ্ছিলো না।
অবশেষে সেই তাইজুলেই ভাঙে অতিথিদের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ইনিংসের ৭৪তম ওভারের চতুর্থ বলে সেঞ্চুরিয়ান স্টাবিসের ষ্ট্যাম্প ভেঙে দেন তাইজুল। ১৯৮ বলে ১০৬ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন প্রোটিয়া তারকা। ছয় চার আর তিন ছক্কায় সেঞ্চুরির ইনিংস খেলে তিনি যখন সাজঘরে ফিরেন, প্রোটিয়াদের দলীয় রান তখন ২৭০।
স্টাবিসের বিদায়ে তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ে ফেলেন জোর্জি ও ডেভিড। ১১৬ রানের সেই জুটিও ভাঙতে হয় তাইজুলকে। আজ সকালের সেশনে ইনিংসের ৯৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডেভিড বেডিংহামকে ফেরান তাইজুল। দলীয় রান যখন ৩৮৬, তখনি সাজঘরে ফেরেন ডেভিড। তবে তার আগেও হাঁকিয়ে নেন হাফ সেঞ্চুরি। দুই চার ও চার ছক্কায় ৭৮ বলে খেলেন ৫৯ রানের এক ইনিংস।
বাংলাদেশের বড় বাঁধা হয়ে উঠেন সেঞ্চুরিয়ান জোর্জি। ডাবল সেঞ্চুরির পথে হাটা প্রোটিয়া ওপেনারকেও থামাতে হয় তাইজুলকে। ইনিংসের ১০১তম ওভারের শেষ বলে ১৭৭ রান করা এই ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরত পাঠান বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। প্রোটিয়াদের রান ততোক্ষণে ৩৯১। দুর্দান্ত হয়ে উঠা তাইজুল এরপরই ভেরেইনাকে দিয়ে ১৪তম ফাইফার তুলে নেন। ৩ বল খেলা ভেরেইনা রানের খাতাও খুলতে পারেননি। ইনিংসের ১০৩তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় রান ৩৯১ থাকতেই প্যাভেলিয়নে ফেরত যান তিনি।
এরপরই উইকেটের দেখা পান বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার নাহিদ রানা। সাউথ আফ্রিকার ষষ্ট উইকেটটি শিকার করেন তিনি। ইনিংসের ১১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৪২৩ রানের মাথায় নাহিদ রানার শিকারে সাজঘরে ফেরেন ১২ রান করা রিকল্টেন। এরপরই সপ্তম উইকেটে জুটি গড়েছেন মুল্ডার ও মুথুসামি। ১৫২ রান তুলে তাদের জুটি ইনিংসের সমাপ্তি টানে। আট চার ও চার ছক্কায় ১৫০ বলে ১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন মুল্ডার। ৭৫ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন মুথুসামি। পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংসটি।
বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল একাই পাঁচ’টি উইকেট নিয়েছেন। নাহিদ রানার শিকার একটি উইকেট।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০