কাইয়ুম আল রনি:: সিলেট। ছোট্ট বিভাগীয় এক শহর। মাত্র চার জেলা নিয়েই বিভাগ। সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। চার জেলার ক্রিকেটারদের নিয়েই গড়া হয় সিলেট বিভাগীয় দল। এই ছোট্ট বিভাগীয় শহরের দলেও সুযোগ মেলে না সুনামগঞ্জের ক্রিকেটারদের। প্রথম শ্রেণীর ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় টুর্নামেন্ট জাতীয় লিগ দেখতে দেখতে ২৫টি মৌসুম পেরিয়েছে। চলছে ২৬তম মৌসুম। অথচ দুই যুগের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সুনামগঞ্জ থেকে মাত্র দু’জন ক্রিকেটার খেলেছেন বিভাগীয় দলে। দুই যুগ পেরিয়ে চলা জাতীয় লিগে একজন এসে হারিয়ে যাওয়ার আরো এক যুগ পরে এবার এলেন আরো একজন।
সিলেট বিভাগে ক্রিকেটে হতাশার নাম সুনামগঞ্জ। বয়স ভিত্তিক বিভাগীয় দলগুলোতেই সুনামগঞ্জের সংখ্যাটা খুব বড় হয় না। তিন থেকে পাঁচ জনেই থেকে যায় বেশির ভাগ সময়ই। কখনো কখনো এক দুইয়ে থেকে যায় সুনামগঞ্জের উপস্থিতি। প্রতি বছরই বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ দল গঠন করা হয়। চার জেলার ক্রিকেটারদের নিয়ে গঠন করা এসব দলে সবচেয়ে কম ক্রিকেটার থাকেন সুনামগঞ্জ থেকেই। পাইপলাইন থেকেই ছোট্ট হয়ে আসা সুনামগঞ্জের তালিকায় সিনিয়র দল অর্থাৎ বিভাগীয দলে থাকেন না কেউ।
চলমান ২৬তম জাতীয় ক্রিকেট লিগে এসে দেখা মিলেছে সুনামগঞ্জের একজন ক্রিকেটারের। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে সিলেটের হয়ে অভিষেক হয়েছে তরুণ ব্যাটার মুবিন আহমদ দিশানের। রংপুরের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে সুনামগঞ্জের এই কিশোরের। দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত মাত্র দু’জন ক্রিকেটার খেলেছেন জল জোছনার শহরটি থেকে।
২০১১-২০১২ মৌসুমে প্রথমবার সুনামগঞ্জ থেকে কোনো ক্রিকেটার খেলেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। পেসার ফখরুল ইসলাম নিপুকে দিয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রবেশ করে প্রাকৃতিক সম্পদেক ভরপুর, হারওবেষ্টিত সুনামগঞ্জ। ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল রাজশাহীর কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের একটি ম্যাচই খেলেন নিপু। ‘ড্র’ হওয়া ম্যাচটির প্রথম ইনিংসে ১১ ওভারে ১ মেডেনে ৪৩ রানে দু’টি উইকেট নিয়ে ছিলেন নিপু। ফিরিয়েছেন বরিশালের দুই ওপেনার বিকাশ শর্মা ও নাসির উদ্দিন ফারুকীকে। প্রথম ইনিংসে শুন্য করা এই ফারুকী দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন সেঞ্চুরি। নিপু তীয় ইনিংসে ৬ ওভারে ২ মেডেনে ১২ রান খরচ করে ছিলেন উইকেট শুন্য। ওই এক ম্যাচের পর আর খেলার সুযোগ মিলেনি তার। থেমে যায় ক্রিকেট ক্যারিয়ারও।
অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে রংপুরের বিপক্ষে দিশান ১৭ রান করে রানআউটে কাটা পড়েছেন। ৫৩ বলের ইনিংসে দু’টি বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন এই তরুণ। শনিবার তাকে অভিষেক ক্যাপ পরিয়ে দেন জাতীয় দলের দুই সিলেটী তারকা পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী ও সৈয়দ খালেদ আহমদ। দীর্ঘ বার বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সিলেট দলে এলো সুনামগঞ্জের প্রতিনিধিত্ব।
সুনামগঞ্জের ক্রিকেটাররা এতোটা পিছিয়ে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সুনামগঞ্জের ক্রীড়া সংগঠক, সদ্য সাবেক জেলা ক্রিকেট কমিটির সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, সুনামগঞ্জে প্রতিভাবান অনেক ক্রিকেটার আছেন। সুনামগঞ্জের ক্রিকেটারদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
হাহাহাকার করতে থাকা সুনামগঞ্জের এবার আশার আলো দিশান।দিশাহীন সুনামগঞ্জের ক্রিকেটে নিশ্চয়ই পথের দিশারী হতে চাইবেন তিনি।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০