স্পোর্টস ডেস্ক:: নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ম্যাচে আগুনে বোলিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তরুণ পেসার তানজীম হাসান সাকিব। সিলেটের এই পেসার মাত্র পঞ্চম ম্যাচ খেলতে নেমেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে শক্তিশালি স্বাগতিকদের ধ্বসিয়ে দিলেন।
বল হাতে ৭ ওভারে ২২ রানে তিন উইকেট শিকার করেছেন। প্রথম দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে দুর্দান্ত শুরু এনে দিয়ে ছিলেন তিনিই। ফলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে তার হাতেই। সাকিব, শরিফুল-সৌম্যদের বোলিং তোপে নিউজিল্যান্ড মাত্র ৯৮ রানেই গুটিয়ে যায়। ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ এড়ায় টাইগাররা।
ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথমবারের মতো পেলো ওয়ানডে জয়ের স্বাদ। ব্ল্যাকক্যাপসদের গুড়িয়ে দিয়ে দাপটের সাথেই ওয়ানডে সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। এড়ালো হোয়াইটওয়াশ।
স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা। ১৮ ওয়ানডের পর ১৯তম ওয়ানডেতে এসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের কৃতিত্ব গড়লো নাজুমল হোসেন শান্তর দল।
টেনেঠুনে জয় নয়, ব্যাট-বল হাতে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েই দারুণ শুরু করে টাইগাররা। সাকিব, সৌম্য, শরিফুল-মুস্তাফজিদের আগুনে বোলিংয়ে মাত্র ৯৮ রানে আটকে রাখে। ৯৯ রানের সহজ লক্ষ্যে খেলতে নামা বাংলাদেশ শান্তি-বিজয়ের ব্যাটে হেসে খেলেই নেপিয়ার জয় করেছে।
দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও এনামুল হক বিজয় দারুণ শুরু করে ছিলেন। তবে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি সৌম্য সরকার। দলীয় ১৫ রানের মাথায় চোখের সমস্যা নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ১৬ বলে ৪ রান করে দেখে শুনে ব্যাট করতে থাকা সৌম্যের চোখে কিছুটা পড়েছিলো। মাঠে পানি ছিটিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চেয়ে ছিলেন, পারেননি। এরপর ফিজিও এসে ড্রপ দিলেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সৌম্য স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন।
তার বিদায়ের পর উইকেটে আসেন শান্ত। বিজয়কে নিয়ে তিনি জয়ের পথে এগুচ্ছেন। তবে শান্তকে রেখে দারুণ ব্যাট করে বিজয় ফিরেন সাজঘরে। ইনিংসের ১৩তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৮৪ রানের মাথায় একমাত্র উইকেটটি হারায় টাইগাররা। সাত চারে ৩৩ বলে ৩৭ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে ফিরেন বিজয়।
আটটি দৃষ্টিনন্দন চারে ৪২ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক নাজুমল হোসেন। ১ রানে তার সঙ্গী হন লিটন দাস।
অধিনায়ক শান্ত লিটন দাসকে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। তুলে নেন নিজের ফিফটি।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে উইলিয়াম ও’রর্ক ১টি উইকেট লাভ করেন।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ড শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে। সাকিব, শরিফুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের দিনে সৌম্যও দেখান তার ম্যাজিক। তিন পেসার তিনটি করে উইকেট নিয়ে কিউদের ব্যাটিং লাইনআপ ধ্বসিয়ে দেন। মুস্তাফিজের দখলে থাকে একটি উইকেট।
আগে ব্যাট করতে নামা রাচিন রবীন্দ্রকে ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৬ রানে সাজ ঘরে পাঠান সাকিব। ৮ বলে ১২ রান করেন তিনি। এরপর সাকিব ইনিংসের অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে হেনরি নিকোলাসকে প্যাভেলিয়নে ফেরত পাঠান দলীয় ২২ রানের মধ্যে। ১২ বলে ১ রান করেন তিনে নামা এই ব্যাটার।
তরুণ পেসারের দুই উইকেট শিকারের পরপরই শরিফুলও উইকেটের খাতা খুলেন। স্বাগতিক অধিনায়ক টম লাথামের স্ট্যাম্প উপরে ফেলেন ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৫৮ রানের মাথায়। ৩৪ বলে ২১ রান করতে পারেন লাথাম।
শরিফুলও যেনো অনুসরণ করেন সাকিব। নিজের টানা দ্বিতীয় উইকেটও তুলে নেন তিনি। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে ওপেনার উইল ইয়াংকে প্যাভেলিয়নে ফেরত পাঠান এই পেসার। তিন চারে ৪৩ রানে ২৬ রান করে কিউ ওপেনার।
বাংলাদেশের দুই পেসারের আগুনে বোলিংয়ে স্বাগতিকরা কোনো জুটিই গড়তে পারেনি। একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। ২১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মার্ক চ্যাম্পম্যানকে বিদায় করে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান শরিফুল। দলীয় ৬৩ রানে ব্যক্তিগত মাত্র ২ রানে বিদায় নেন এই ব্যাটার।
এরপর আবারো উইকেট তুলে নেন সাকিব। সাত রান যোগ করতেই কিউরা হারায় ষষ্ট উইকেট। ইনিংসের ২৩তম ওভারের প্রথম বলে টম ব্লান্ডেল ফিরেন দলীয় ৭০ রানে। মিরাজের হাতবন্দী হওয়ার আগে ১৭ বলে ৪ রান করে উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করেন তিনি।
ব্লান্ডেলের বিদায়ের পর ৫ রান যোগ করতেই স্বাগতিকরা হারায় সপ্তম উইকেট। এবার উইকেটের খাতায় নাম তুলেন সৌম্য সরকার। জশ ক্লার্কসনকে প্যাভেলিয়নের পথ দেখান তিনি। ২৭তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৮৫ রানে বিদায় নেওয়ার আগে ২৩ বলে ১৬ রান করেন তিনি।
জশ ক্লার্কসনের স্ট্যাম্প উপরে ফেলা সৌম্য সরকার দেখাতে শুরু করেন ম্যাজিক। নিজের পরের ওভারের অর্থাৎ ২৯তম ওভারের শেষ বলে অ্যাডাম মিলানেরও স্ট্যাম্প উপরে ফেলেন তিনি। ২০ বলে ৪ রান করা মিলানের বিদায়ে দলীয় ৮৬ রানে অষ্টম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
সৌম্য যেনো থেমে যাওয়ার পাত্র নন। নিজের পরের ওভারে চতুর্থ বলে আদি অশোকেরও স্ট্যাম্প ভেঙে দেন তিনি। তাতেই ইনিংসের ৩১তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ৯৭ রানের মাথায় নবম উইকেট হারায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। পরের ওভারের চতুর্থ বলে উইলিয়াম ও’রর্কের স্ট্যাম্প ভেঙে স্বাগতিকের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন মুস্তাফিজ। ৩১.৪ ওভারে মাত্র ৯৮ রানেই থেমে যায় কিউরা।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব, সৌম্য, শরিফুল ৩টি ও মুস্তাফিজ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০
Discussion about this post