নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে এসে থামলো বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ দল অলআউট হয়েছে ৩৬৯ রানে। লিড পেয়েছে ১৫৫ রানের। মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, সাকিবের ফিফটির পর শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটি। তবে এরপরও চারশ রান স্পর্শ করতে পারেনি টাইগাররা।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ইনিংসে আগের দিনের করা ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন আজ সকালে ফের ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ দল। তবে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। দিনের তৃতীয় ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন টপ অর্ডার ব্যাটার মুমিনুল হক।
মার্ক অ্যাডায়ারের বলে বোল্ড আউট হয়ে মুমিনুল বিপদে ফেলে যান দলকে। দলীয় ৪০ আর ব্যক্তিগত ১৭ রানে কাঁটা পড়েন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৪০ রানের ৩ উইকেট হারানো দলের হয়ে এরপরই হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজনের দারুণ জুটিতে ছুটে চলে বাংলাদেশ। দলের রান দেড়শ’র ঘর পার করেই দুজন মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান। এর আগে অবশ্য ফিফটি পূরণ করে নেন। বিরতি থেকে ফিরে এসে, আরও ২৯ রান যোগ করেন দলের নামের পাশে।
তবে দলের রান দুইশ ছোঁয়ার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে এসে ভালো ব্যাট করলেও, মাত্র ১৩ রানের জন্য তিন অঙ্কের রানের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি এই বাঁহাতি। ৪৪তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় তিনি আউট হন ম্যাকব্রাইনের বলে। তবে এর আগে আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ৯৪ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে ৮৭ রান করেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার ৩১তম ফিফটি।
চতুর্থ উইকেট মুশফিকুর রহিমের সাথে ১৫৯ রানের অনবদ্য জুটি গড়েছিলেন সাকিব। সেই জুটিতেই বিপদ থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। সাকিবের আউটের পর উইকেটে আসেন লিটন দাস। মুশফিকুর রহিম তাকে নিয়ে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন। দুজনের ব্যাটে আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রান টপকে লিড নেয় বাংলাদেশ।
সাকিব না পারলেও, সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের দশম সেঞ্চুরির দেখা পান এই তারকা ব্যাটার। প্রায় এক বছর পর এই ফরম্যাটে সেঞ্চুরি হাঁকান। সবশেষ ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মিরপুরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। মাঝে ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন গেল বছরের শেষ দিকে। তবে সেসময় খুব একটা রান পাননি।
তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে এসে বড় রানের দেখা পেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন নিজের খেলা ১৩৫ বলে। এর আগে ফিফটিও পূরণ করেছিলেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। মুশফিকের সেঞ্চুরির সাথে লিটন দাসের আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল।
তবে হুট করে ৮৭ রানের জুটি ভেঙে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লিটন দাস। ম্যাচের ৫৮তম ওভারের তৃতীয় বলে রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান লিটন। একেবারে সহজ রান আউট করতে পারেনি আইরিশরা। কিন্তু এমন জীবন পেয়েও বেন ওয়াইটের একই ওভারে এক বল পরেই লং অফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে লরকান টাকারের সহজ ক্যাচে পরিণত হন।
আউট হওয়ার আগে ৪১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৪৩ রান করেন। মাত্র ৭ রানের জন্য ফিফটি মিস করেন তাড়াহুরোর কারণে। লিটনের বিদায়ে খানিকটা বিপাকেই বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে এখন মিরাজকে সাথে নিয়ে দলকে টানেন মুশফিক। চা-বিরতির আগে ৩০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের রান পার করেন তিনশ। একইসাথে বাংলাদেশকেও এনে দেন শত রানের লিড।
তবে চা-বিরতি থেকে ফিরেই মুশফিকের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় দল। ব্যক্তিগত ১২৬ রানের মাথায় কাঁটা পড়েন ম্যাকব্রাইনের বলে। ৬৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লং অনে মুশফিক ক্যাচ আউট হন। দারুণ ডাইভ দিয়ে কমিন্স সেটি লুফে নেন। দলকে বাঁচানো নিজের দুর্দান্ত ইনিংসটি মুশফিক সাজিয়েছেন ১৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার মারে।
এই তারকার বিদায়ে খানিকটা বিপাকেই পড়ে বাংলাদেশ। শেষ দিকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং লাইনআপকে নিয়ে একা লড়াইয়ের চেষ্টা চালান মিরাজ। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। ৩৬৯ রানেই থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস। একেবারের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে মিরাজ পূরণ করেন নিজের ফিফটি। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ ফিফটি হাঁকিয়ে মিরাজ খেলেন ৮০ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংস।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে একাই ৬ উইকেট শিকার করেন ম্যাকব্রাইন। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম নিজের পাঁচ বা এর বেশি উইকেটের দেখা পেলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। এর বাইরে মার্ক অ্যাডায়ার ও বেন ওয়াইট দুটি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post