স্পোর্টস ডেস্কঃ জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শেষ করল বাংলাদেশ। সুপার ফোর পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শুক্রবার ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। ২০১২ এশিয়া কাপের পর এই প্রথম রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের হারাল টাইগাররা।
কলম্বোয় বাংলাদেশের করা ২৬৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নামা ভারতের শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ১৭ রান। মুস্তাফিজুর রহমান ৪৮তম ওভারে আক্রমণে এসেই শার্দুল ঠাকুরকে ফেরান। এরপর ফিরেন অক্ষর পাটেলও। তাঁকে স্লোয়ারে বোকা বানান মুস্তাফিজ। দুই উইকেট নিতে সেই ওভারে তিনি খরচ করেছেন ৫ রান।
শেষ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১২ রান। শেষ ওভারে সাকিব আল হাসান আস্থা রাখেন তানজিদ হাসান তামিমের উপর। এদিন অভিষেক হওয়া তরুণ এই পেসার দিয়েছেন ৫ রান। বাংলাদেশ জয় পায় ৬ রানে। ২০১২ সালের পর এবারই প্রথম এশিয়া কাপে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ। ম্যাচে ৭ ওভার ৫ বলে ৩২ রানের খরচায় সাকিব তুলে নিয়েছেন ২ উইকেট। শেষ ওভারে বাংলাদেশ দলের জয় নিশ্চিত হয় সাকিবের বলেই।
বাংলাদেশের ২৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকে ভুগেছে ভারত। শূন্য রানে অধিনায়ক রোহিত ও অভিষিক্ত তিলককে ব্যক্তিগত ৫ রানে ফেরান সাকিব। এরপর লোকেশ রাহুল ও শুভমান গিল মিলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটি ভাঙার পর দ্রুতই আউট হয়েছেন ঈশান কিশান। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লউ হয়েছেন তিনি। ফেরার আগে ৫ রান করেন ইশান।
এরপর সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েন গিল। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৪৫ রান। তাদের জমে উঠা জুটি ভাঙেন সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন সূর্যকুমার। ডানহাতি এই ব্যাটার করেছেন ২৬ রান। এরপর দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন গিল। শেষ পর্যন্ত তিনি ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ১২১ রানের ইনিংস খেলেন ১৩৩ বলে। শার্দুুলকে জ্বলে উঠার আগে ফেরান মুস্তাফিজ। এরপর অক্ষরকেও নিজের শিকার বানিয়েছেন তিনি।
বাঁহাতি মুস্তাফিজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৪২ রান করা অক্ষর। এরপর কেউই ব্যাট হাতে দায়িত্ব নিয়ে ভারতকে জেতাতে পারেননি। শেষ ওভারে মোহাম্মদ শামিকে রান আউট করে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া তানজিম সাকিব ও মেহেদি দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। ব্যাটে বলে সেরা পারফর্ম করা সাকিব জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। ব্যাট হাতে ৮০ রানের পর বল হাতে তিনি নেন ১ উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুতে ফিরে যান বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস। টিকতে পারেন নি তানজিদ হাসান তামিমও। সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় হয়েছেন ব্যর্থ। পাঁচে নামা মেহেদি হাসান মিরাজও থিতু হতে পারেন নি আজ। রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়েছেন লিটন। শামির সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলের লাইন বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। ফলে শূন্য রানেই ফিরে যেতে হয় তাকে।
এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার তামিম। তিনি ১২ বলে ১৩ রান করে শার্দুল ঠাকুরের ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে ১১ বলে ৪ রান করে আউট হয়েছেন এনামুল বিজয়। প্রমোশন পেয়ে পাঁচ নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ একই ওভারে দুইবার জীবন পেয়েছেন। তবু ইনিংস বড় করতে পারেন নি তিনি। ২৮ বলে ১৩ রান করে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
৬৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অধিনায়ক সাকিব। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তরুণ ব্যাটার হৃদয়। ১১১ বলে হৃদয়কে নিয়ে সাকিব পঞ্চম উইকেটে যোগ করেছেন ১০০ রান। এরপর নিজের ইনিংস বেশিদূর এগোতে পারেননি সাকিব। ব্যক্তিগত ৮০ রানে। শার্দুলের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ৩টি ছক্কা ও ৬টি চারে সাজানো ছিল সাকিবের ৮৫ বলের ইনিংসটি। শামীম পাটোয়ারি দায়িত্ব পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন আজ। এই বাঁহাতি ব্যাটার ফিরে গেছেন মাত্র ১ রান করে।
এরপর ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ৮১ বলে ৫৪ রানে থামেন। শেষদিকে নাসুম ও শেখ মেহেদি বাংলাদেশের রান বাড়িয়েছে। তুলনামূলক আগ্রাসী ছিলেন নাসুম। তিনি ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। তার ইনিংস জুড়ে ছিল ১টি ছক্কা ও ৬টি চারের মার। এটিই তাঁর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এরপর মেহেদি ও অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিব মিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬৫ পর্যন্ত নিয়ে যান। মেহেদি ২৯ ও সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০
Discussion about this post